'সুভা' গল্পের মূল কাহিনি । চরিত্র বিশ্লেষণ। সৃজনশীল। জ্ঞানমূলক। অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর।
মানুষের কাছ থেকে অবহেলা
পেয়ে সুভা প্রকৃতির কাছে
আশ্রয় খুঁজে নেয়। চণ্ডীপুর গ্রামের নদী, গাছপালা এবং
গোয়ালের প্রাণী— সর্বস্বী ও পাঙ্গুলি নামের
গাভী দুটি, ছাগল ও বিড়াল—
ছিল তার একমাত্র বন্ধু।
এই নীরব বন্ধুরা সুভার
মনের কথা যেন সহজেই
বুঝতে পারত।
গ্রামের অকর্মণ্য যুবক প্রতাপ নদীর
তীরে ছিপ ফেলে মাছ
ধরত, আর সুভা নীরবে
তার পাশে বসে থাকত।
প্রতাপই একমাত্র মানুষ, যে সুভার নীরবতাকে
তার এক বিশেষ মর্যাদা
দিয়েছিল।
সুভার বয়স বাড়তে থাকায়
তার বাবা-মা সমাজের
চাপ ও লোকনিন্দার ভয়ে
অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিশেষ
করে সুভার মা তার বিয়ের
ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। অবশেষে,
বাণীকণ্ঠ তার বোবা মেয়ের
এই ত্রুটি গোপন করে দূরের
এক বরের সঙ্গে তার
বিয়ে ঠিক করেন।
বিবাহের পূর্বে সুভা নদী ও
তার বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায়
নেয়। বিবাহের দিন সুভা নির্বাক
হৃদয়ে এক গভীর কান্না
নিয়ে স্বামীর নৌকায় উঠে পড়ে। গল্পটি
এখানেই শেষ হয়, বাক্প্রতিবন্ধী এক কিশোরীর অসহায়
একাকিত্ব, নীরব যন্ত্রণার করুণ
পরিণতি এবং সমাজের বৈষম্যমূলক
মানসিকতাকে ফুটিয়ে তুলে।
চরিত্র বিশ্লেষণ
'সুভা' গল্পের প্রধান চরিত্রগুলির একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ
নিচে দেওয়া হলো:
১. সুভা (সুভাষিণী)
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র, বাক্প্রতিবন্ধী কিশোরী।
- বাক্প্রতিবন্ধকতা: জন্ম থেকেই কথা বলার ক্ষমতা ছিল না, যা তাকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
- সংবেদনশীলতা
ও নীরবতা: সুভা ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল। কথা বলতে না পারলেও তার ভেতরের অনুভূতি ছিল গভীর। তার চোখ ছিল তার মনের ভাষার একমাত্র মাধ্যম।
- একাকীত্ব
ও হীনমন্যতা: শৈশব থেকেই সে বুঝেছিল যে সমাজে সে অনাকাঙ্ক্ষিত। মায়ের অবহেলা ও সমাজের নিন্দা তাকে এক গভীর একাকীত্বে ঠেলে দেয়, যার ফলে সে নিজেকে লুকিয়ে রাখত।
- প্রকৃতিপ্রেম:
একাকীত্বের বেদনা ভুলতে সে প্রকৃতি ও প্রাণিজগতের মাঝে আশ্রয় নেয়। নদী, গাছপালা, গোয়ালের গরু (সর্বস্বী ও পাঙ্গুলি) ছিল তার বিশ্বস্ত বন্ধু। এদের কাছে সে ছিল স্বাভাবিক, ভালোবাসার পাত্রী।
- অসহায় আত্মসমর্পণ: পিতামাতার নীরব হৃদয়ভার হয়ে থাকা সুভা, শেষ পর্যন্ত সামাজিক চাপে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, অপরিচিত এক পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য হয়।
২. বাণীকণ্ঠ (সুভার বাবা)
সুভার দুই বোন সুকেশিনী
ও সুহাসিনীর পর সে সুভার
জন্ম দেয়।
- স্নেহশীল
বাবা: তিনি সুভার প্রতি তার মায়ের মতো বিরূপ ছিলেন না। বরং, অন্য মেয়েদের চেয়ে সুভাকে তিনি 'একটু বেশি ভালোবাসিতেন'।
- কন্যাদায়গ্রস্ত
পিতা: সমাজের নিন্দার কারণে এবং মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনিও শেষ পর্যন্ত কাতর হন। সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও সমাজের 'একঘরে' হওয়ার ভয় তাকে তাড়া করে।
- অসহায়তা:
সামাজিক ও পারিবারিক চাপের মুখে তিনি মেয়ের এই 'ত্রুটি' গোপন রেখে তার বিয়ে দেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।
৩. সুভার মা (নামোল্লেখ নেই)
সুভার প্রতি সবচেয়ে কঠোর ও বিরক্ত
ছিলেন।
- বিরক্তি
ও অবহেলা: তিনি সুভাকে নিজের 'গর্ভের কলঙ্ক' বা নিজের একটি 'ত্রুটিস্বরূপ' দেখতেন। কন্যাকে নিজের অংশ মনে করার কারণে তার কোনো অসম্পূর্ণতাকে তিনি নিজের লজ্জা বলে মনে করতেন।
- সামাজিক
মানসিকতার প্রতিনিধি: সুভার মা মূলত সেই সমাজের প্রতিনিধি, যেখানে শারীরিক বা অন্য কোনো ত্রুটিযুক্ত সন্তানের জন্মকে অভিশাপ বা পাপের ফল মনে করা হয়।
৪. প্রতাপ
সুভার গ্রামের এক অলস প্রকৃতির
যুবক।
- সহানুভূতিশীল
বন্ধু:
সে সুভার বাক্প্রতিবন্ধকতাকে কোনো সমস্যা হিসেবে দেখত না। বরং সুভার নীরবতা তার কাছে অন্যরকম ছিল। সে সুভার নীরবতাকে উপহাস করেনি বা দূরেও সরিয়ে দেয়নি।
- প্রকৃতি
ও মাছ ধরার সঙ্গী: সে মাছ ধরার সময় সুভার সান্নিধ্য পছন্দ করত। সে-ই একমাত্র মানুষ যে সুভার নীরব উপস্থিতিতে কোনো অস্বস্তি বোধ করত না। যদিও সুভার প্রতি তার অনুভূতি ছিল কিছুটা উদাসীন।
৫. সর্বস্বী ও পাঙ্গুলি (গাভী দুটি)
সুভার গোয়ালের দুটি গাভী।
- নীরব
বন্ধু:
এরা সুভার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও প্রকৃত বন্ধু। এরা সুভার কাছে কোনো কথা ছাড়াই তার মনের ভাব বুঝতে পারত। সুভা এদের গলা জড়িয়ে ধরে তার দুঃখের কথা বলত। এদের কাছে সুভা ছিল স্নেহময়ী ও স্বাভাবিক। তারা প্রতীকীভাবে দেখায় যে, মানুষের থেকে প্রাণিজগতের কাছেই সুভা বেশি সহানুভূতি ও ভালোবাসা পেয়েছে।
এই চরিত্রগুলির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি বাক্প্রতিবন্ধী মেয়ের জীবন, তার ভেতরের আবেগ এবং এক সহানুভূতিহীন সমাজের চিত্র অত্যন্ত দরদের সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।
সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
উদ্দীপক
রহিমা বেগম তার ছোট
ছেলে আকাশকে নিয়ে সবসময় চিন্তিত। আকাশের পড়ালেখায় মন নেই, সে
কথাও বেশি বলে না
এবং সব সময় চুপচাপ
নিজের মনে থাকে। মা
মনে করেন আকাশ তার
বংশের একটি ত্রুটি। অন্যদিকে,
আকাশের পোষা কুকুর 'টমি'
সারাদিন তার পাশে থাকে।
টমিকে আকাশ যা বোঝাতে
চায়, টমি যেন চোখের
ইশারায় বা নীরব অনুভবে
সবই বুঝে নেয়। বাড়ির
কেউ আকাশকে না বুঝলেও টমিকে
সে নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু মনে করে। এক
সন্ধ্যায় মন খারাপ করে
বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে বসে থাকতে থাকতে
আকাশ ভাবছিল, "সবাই কেন কথা
শুনতে চায়, কেউ কেন
অনুভব করতে চায় না?"
ক. সুভার গ্রামের নাম কী ছিল?
খ. "পিতা-মাতার নীরব
হৃদয়ভার" বলতে লেখক কী
বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের আকাশের সাথে 'সুভা' গল্পের সুভার কোন দিকটির মিল
খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. "আকাশের উক্তিটি ('সবাই কেন কথা
শুনতে চায়, কেউ কেন অনুভব
করতে চায় না?') 'সুভা'
গল্পের মূল সুরকে ধারণ
করে।" — বিশ্লেষণ করো।
ক. সুভার গ্রামের নাম কী ছিল?
উত্তর :-সুভার গ্রামের নাম ছিল চণ্ডীপুর।
খ. "পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার"
বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর:"পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার"
বলতে লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভার বোবা হওয়ার কারণে তার বাবা-মায়ের মনের গভীর দুশ্চিন্তা
ও লজ্জাকে বুঝিয়েছেন।
সুভা কথা বলতে পারতো না বলে সমাজে তাদের
যে মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হতো, সেটাই এই ভার।বড়ো দুটি মেয়ের বিয়ের পর সুভার ভবিষ্যৎ
নিয়ে বাবা-মায়ের মনে যে বিরাট উদ্বেগ ছিল, তা তারা কাউকে খুলে বলতে পারতেন না। মনের
ভেতরে সব সময় বহন করা এই অপ্রকাশিত কষ্টকেই লেখক 'নীরব হৃদয়ভার' বলে উল্লেখ করেছেন।
গ. উদ্দীপকের আকাশের সাথে 'সুভা' গল্পের
সুভার কোন দিকটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:উদ্দীপকের আকাশের সাথে 'সুভা' গল্পের
সুভার মানুষের অবহেলা এবং নীরব প্রকৃতির কাছে আশ্রয় খোঁজার দিকটির মিল খুঁজে পাওয়া
যায়।
সুভা কথা বলতে পারত না বলে তার মা তাকে
নিজের 'ত্রুটি' মনে করে অবহেলা করতেন, আর আকাশও চুপচাপ থাকার কারণে তার মায়ের দুশ্চিন্তা
ও বিরক্তির শিকার। এই কারণে, দুজনেই পরিবার বা সমাজের মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে।
এই একাকীত্বে সুভা আশ্রয় খুঁজেছিল গোয়ালের
গরু ও নদীর প্রকৃতির কাছে, যারা তাকে বিচার করত না। অন্যদিকে, আকাশ তার পোষা কুকুর
'টমি'র সাথে মানসিক শান্তি খুঁজে পেয়েছে। এই নীরব প্রাণী ও প্রকৃতিই ছিল তাদের সবচেয়ে
কাছের বন্ধু, যারা তাদের মনের কথা অনুভব করত, শুনতে চাইত না।
ঘ. "আকাশের উক্তিটি 'সবাই কেন কথা
শুনতে চায়, কেউ কেন অনুভব করতে চায় না?' 'সুভা' গল্পের মূল সুরকে ধারণ করে।"
— বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:হ্যাঁ, আকাশের উক্তিটি 'সুভা' গল্পের
মূল মানবিক সুরকে সম্পূর্ণরূপে ধারণ করে।
সুভা বাকহীন ছিল, কিন্তু তার একটি গভীর
অনুভূতিপ্রবণ মন ছিল, যা তার বড় বড় কালো চোখের মাধ্যমে প্রকাশ পেত। কিন্তু সমাজের মানুষ
কেবল মুখের ভাষা বা 'কথা' শুনতে অভ্যস্ত। তারা বোঝে না যে, কথা ছাড়াও একটি মানুষ অনুভব
করতে পারে, কষ্ট পেতে পারে বা আনন্দিত হতে পারে।
এই কারণেই সুভা যখন মানুষের কাছে অবহেলিত
হয়েছে, তখন সে আশ্রয় খুঁজেছে নীরব প্রকৃতির কাছে। তার বন্ধু সর্বস্বী ও পাঙ্গুলি বা
চণ্ডীপুরের নদী তার কোনো কথা শুনতে চায়নি। তারা শুধু সুভার নীরব উপস্থিতি এবং তার
মনের কষ্ট অনুভব করত এবং ভালোবাসত।
আকাশের এই উক্তিটি রবীন্দ্রনাথের সেই
গভীর প্রশ্নটিই প্রকাশ করে। লেখক দেখিয়েছেন, সমাজের মানুষেরা কেবল বাইরের প্রকাশ (অর্থাৎ
কথা) নিয়ে ব্যস্ত থাকে, ভেতরের অনুভূতি (অর্থাৎ অনুভব) বোঝার চেষ্টা করে না। তাই, আকাশের
উক্তিটি সুভা গল্পের মানবিক আবেদন ও মূল ভাবনাকে পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলেছে।
'সুভা' গল্পের গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘সুভা’ গল্পটি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন গ্রন্থ থেকে
সংকলিত হয়েছে?
উত্তর: 'গল্পগুচ্ছ' থেকে।
২. সুভার পুরো
নাম কী?
উত্তর: সুভাষিণী।
৩. সুভার বাবার
নাম কী?
উত্তর: বাণীকণ্ঠ।
৪. সুভার মা
সুভাকে কীসের কলঙ্ক মনে করতেন?
উত্তর: নিজের গর্ভের কলঙ্ক।
৫. সুভাষিণীর বড়
দুই বোনের নাম কী?
উত্তর: সুকেশিনী ও সুহাসিনী।
৬. ছোট মেয়েটি
কার নীরব হৃদয়ভারের মতো
বিরাজ করছিল?
উত্তর: পিতামাতার নীরব হৃদয়ভারের মতো।
৭. সুভা জন্ম
থেকেই কী ধরনের প্রতিবন্ধী?
উত্তর: বাকপ্রতিবন্ধী।
৮. সুদীর্ঘ পল্লববিশিষ্ট
বড় বড় দুটি কালো
চোখ কার ছিল?
উত্তর: সুভার।
৯. সুভার ওষ্ঠাধর
ভাবের আভাসমাত্র কিসের মতো কেঁপে উঠত?
উত্তর: কচি কিশলয়ের মতো।
১০. সুভা নিজেকে
বিধাতার কী মনে করত?
উত্তর: অভিশাপ।
১১. কে নির্জন
দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন ও
সঙ্গীহীন ছিল?
উত্তর: সুভা।
১২. উন্নত শ্রেণির
জীবের মধ্যে সুভার যে সঙ্গী জুটেছিল
তার নাম কী?
উত্তর: প্রতাপ।
১৩. প্রতাপের প্রধান
শখ কী ছিল?
উত্তর: ছিপ ফেলে মাছ
ধরা।
১৪. প্রতাপের কাছে
বাক্যহীন সঙ্গী শ্রেষ্ঠ কেন?
উত্তর: ছিপ ফেলে মাছ
ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই
সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলে।
১৫. 'সুভা' গল্পে
কাকে অকর্মণ্য বলা হয়েছে?
উত্তর: প্রতাপকে।
১৬. সুভার সখী
ও সঙ্গী দুটি গাভীর নাম
কী?
উত্তর: সর্বশী ও পাঙ্গুলি।
১৭. সুভা দিনের
মধ্যে কতবার গোয়ালঘরে যেত?
উত্তর: তিনবার।
১৮. সুভা অবসর
সময়ে কোথায় গিয়ে বসত?
উত্তর: নদীতীরে।
১৯. সুভা গোয়ালঘরের
দরজায় দাঁড়ালে সর্বশী ও পাঙ্গুলি কী
করত?
উত্তর: সুভার গা চাটতে থাকত।
২০. ‘ঝিল্লিরব’ অর্থ
কী?
উত্তর: ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ বা শব্দে মুখর।
২১. নদীটি কার
মতো জনশূন্য ও সঙ্গীহীন?
উত্তর: সুভার মতো।
২২. কার কাছে
সুভা মুক্তির আনন্দ পায়?
উত্তর: বিপুল নির্বাক প্রকৃতির কাছে।
২৩. সুভা জলকুমারী
হলে কী করত?
উত্তর: আস্তে আস্তে জল থেকে উঠে
সাপের মাথায় মণি ঘাটে রেখে
দিত।
২৪. বাণীকণ্ঠের আর্থিক
অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর: সচ্ছল।
২৫. সুভা কার
দুই বাহুতে প্রকাণ্ড মূক মানবতাকে ধরে
রাখতে চায়?
উত্তর: নিজের।
২৬. কোথায় বসে
সুভা চন্দ্রের দিকে অনিমেষভাবে চেয়ে
থাকত?
উত্তর: তেঁতুলতলায়।
২৭. 'সুভা' গল্পে
কোন তিথির কথা উল্লেখ আছে?
উত্তর: শুক্লাদ্বাদশীর তিথি।
২৮. কোন তিথির
প্রকৃতি সুভার মতো একাকিনী?
উত্তর: শুক্লাদ্বাদশীর তিথি।
২৯. সুভার গাম্ভীর্যপূর্ণ
নীরবতার একমাত্র ব্যাখ্যা কে বুঝত?
উত্তর: প্রতাপ।
৩০. সুভার বাবা
কখন স্থির করলেন তাকে বিদেশে নিয়ে
যাবেন?
উত্তর: যখন তার বিয়ের
প্রস্তাব আসছিল না।
সুভা' গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্রশ্ন: সুভার মা তাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন কেন?
উত্তর: সুভা জন্মগতভাবে কথা
বলতে পারত না বলে
তার মা তাকে নিজের
গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন।
আসলে, সমাজে শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মানো সন্তানকে
অনেকে পরিবারের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বা
অশুভ মনে করত। সুভার
মাও লোকনিন্দার ভয়ে ও মেয়ের
এই জন্মগত ত্রুটির কারণে তার প্রতি বিরক্ত
ছিলেন। এই অপ্রকাশ্য দুশ্চিন্তা
থেকেই তিনি সুভাকে কলঙ্ক
জ্ঞান করতেন।
২. প্রশ্ন: “ছোটটি পিতামাতার নীরব হৃদয়ভারের মতো বিরাজ করিতেছে”– কথাটির অর্থ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এই উক্তিটি দ্বারা
সুভার বাক্প্রতিবন্ধিতার কারণে
তার পিতামাতার অপ্রকাশিত দুশ্চিন্তাকে বোঝানো হয়েছে।
সুভার জন্ম ও তার
ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা পিতামাতার হৃদয়ে সবসময় ভার হয়ে থাকত,
যা তারা প্রকাশ্যে কাউকে
বলতে পারতেন না। সুভার উপস্থিতি
যেন তাদের সেই অপ্রকাশিত দুঃখ,
লজ্জা ও দুশ্চিন্তার প্রতীক
হয়ে ছিল। তাই বলা
হয়েছে, সুভা যেন তাদের
নীরব হৃদয়ভারের মতো বিরাজ করছিল।
৩. প্রশ্ন: প্রতাপ কেন সুভার মর্যাদা বুঝত?
উত্তর: ছিপ ফেলে মাছ
ধরার সময় নীরবতা প্রয়োজন
হওয়ায় প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত।
প্রতাপের মাছ ধরার শখ
ছিল এবং এই কাজে
বাক্যহীন সঙ্গীই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। সুভা নীরব থাকায়
মাছ ধরার ক্ষেত্রে কোনো
ব্যাঘাত সৃষ্টি হতো না, বরং
সঙ্গী হিসেবে সে ছিল আদর্শ।
তাই প্রতাপ সুভার বাক্হীনতাকে ত্রুটি
হিসেবে না দেখে, তার
নীরবতার গুরুত্ব উপলব্ধি করত।
৪. প্রশ্ন: "সুভার ভাষা তাহার সুদীর্ঘ পল্লববিশিষ্ট বড়ো বড়ো দুটি কালো চোখ"– বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বাক্প্রতিবন্ধী সুভা
যেহেতু কথা বলতে পারত
না, তাই তার চোখই
ছিল তার মনের ভাব
প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম।
সুভার ভেতরের সমস্ত অব্যক্ত ভাব, যেমন বেদনা,
আনন্দ, বা কৌতূহল—সবই
তার বড় দুটি কালো
চোখ দিয়ে প্রকাশিত হতো।
তার চোখ যেন মনের
এক নীরব ভাষা ছিল,
যা বাইরের জগতের সঙ্গে তার ভেতরের অনুভূতির
সংযোগ স্থাপন করত। এই চোখ
দিয়েই সে যেন কথা
বলত।
৫. প্রশ্ন: সুভা নিজেকে বিধাতার অভিশাপ মনে করত কেন?
উত্তর: সুভা বুঝতে পারত
যে তার জন্মগত ত্রুটির
কারণে পরিবার ও সমাজে সে
সবসময় উপেক্ষিত।
এই উপলব্ধি থেকেই
তার মনে হতো, সে
যেন এই পৃথিবীতে বিধাতার
এক অভিশাপ হিসেবেই জন্মগ্রহণ করেছে। সমাজে সবাই তাকে নিয়ে
দুশ্চিন্তা করে, তার মাও
তাকে ভালোবাসতে পারেন না। নিজের এই
করুণ অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরই সুভা নিজেকে
অভিশাপ মনে করত।
৬. প্রশ্ন: সুভা পশুপাখির কাছে মুক্তির আনন্দ পেত কেন?
উত্তর: পশুপাখি সুভার বাক্হীনতাকে তার
ত্রুটি হিসেবে দেখত না, বরং
তাকে নিঃশর্ত ভালোবাসা দিত।
মানুষ সুভাকে তার এই অক্ষমতার
জন্য অবজ্ঞা ও ঘৃণা করত,
কিন্তু তার গাভী সর্বশী
ও পাঙ্গুলি তাকে ভালোবাসত। নির্বাক
প্রাণীরা তার নীরবতাকে স্বাভাবিকভাবেই
গ্রহণ করত। এই প্রাণীদের
সান্নিধ্যেই সুভা সমাজের ঘৃণা
থেকে নিজেকে মুক্ত ও স্বাভাবিক মনে
করত।
৭. প্রশ্ন: সুভা বিপুল নির্বাক প্রকৃতির কাছে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারত—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সুভা মানুষের জগতে
বাক্হীন ও নিঃসঙ্গ
হলেও প্রকৃতির জগতে সে ছিল
সাবলীল ও মুক্ত।
নদীতীর, আকাশ বা বিশাল
প্রকৃতি—সবই ছিল তার
মতোই নীরব ও বাক্যহীন।
সুভা তার ভেতরের অব্যক্ত
অনুভূতিকে প্রকৃতির এই বিশাল নীরবতার
সঙ্গে মিলিয়ে দিত। এই নির্বাক
প্রকৃতির কাছে তার নীরবতা
কোনো ত্রুটি ছিল না, বরং
তা প্রকৃতির নিজস্ব সুরের অংশ হয়ে উঠত।
৮. প্রশ্ন: শুক্লাদ্বাদশীর তিথির সঙ্গে সুভার একাকিত্বের তুলনা করা হয়েছে কেন?
উত্তর: শুক্লাদ্বাদশীর তিথিতে চাঁদ ক্ষীণ ও
আবছা থাকে, যার আলোয় এক
বিষণ্ণ নীরবতা ছেয়ে থাকে।
এই তিথির প্রকৃতিতে
যে ম্লানতা ও শান্ত একাকিত্ব
বিরাজ করে, সুভার জীবনেও
তা-ই ছিল। সমাজে
সুভা ছিল একক, নীরব
এবং কিছুটা বিষণ্ণতার প্রতিমূর্তি। তিথির এই নীরব ও
ম্লান প্রকৃতির সঙ্গে সুভার একাকিত্ব ও করুণ নীরবতার
মিল থাকায় এই তুলনা করা
হয়েছে।
৯. প্রশ্ন: প্রতাপের জন্য সুভার বরাদ্দ পানটি কেন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে?
উত্তর: প্রতাপ ছিল সুভার নীরব
জীবনের একমাত্র বন্ধু, তাই তার প্রতি
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এই পানটি
ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাক্হীন সুভা
তার কৃতজ্ঞতা বা বন্ধুত্বের প্রকাশ
করতে পারত না। প্রতিদিন
ছিপ ফেলার সময় প্রতাপকে এই
পানটি তৈরি করে দেওয়া
ছিল সুভার নীরব ভালোবাসা ও
বন্ধুত্বের এক প্রতীকী প্রকাশ।
এই পানটি তার অব্যক্ত হৃদয়ের
ভালোবাসার বাহক ছিল।
১০. প্রশ্ন: "মর্মবিদ্ধ হরিণীর মতো সুভা কাহার দিকে তাকাইল?"—কেন?
উত্তর: সুভার বাবা যখন তাকে
বিদেশে নিয়ে গিয়ে বিয়ে
দেওয়ার স্থির করেন, তখন তীব্র মানসিক
আঘাতে সুভা এভাবে তাকিয়েছিল।
সুভা বুঝতে পারে
যে তাকে তার প্রিয়
পরিবেশ, বন্ধু ও সঙ্গী-সাথী
থেকে চিরতরে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।
এই বিচ্ছেদের চিন্তা তাকে অত্যন্ত আঘাত
দেয় এবং সে ভীত
ও অসহায় হয়ে পড়ে। এ
কারণেই সে মর্মবিদ্ধ হরিণীর
মতো করুণ দৃষ্টিতে বাবার
দিকে তাকিয়েছিল।
১১. প্রশ্ন: সুভার দুই বাহুতে 'প্রকাণ্ড মূক মানবতা' ধরে রাখার আকাঙ্ক্ষা কেন ছিল?
উত্তর: বাক্প্রতিবন্ধী সুভা
তার নিজের নীরবতাকে মানবজাতির অব্যক্ত বেদনার প্রতীক মনে করত।
সে জানত যে
শুধু সে একা নয়,
এই পৃথিবীতে আরও অনেক মানুষ
আছে যারা তাদের মনের
কথা প্রকাশ করতে পারে না
বা যাদের নীরব থাকতে বাধ্য
করা হয়। সুভা এই
সমস্ত বাক্যহীন মানুষের বেদনা বা 'মূক মানবতাকে'
নিজের বাহুতে ধারণ করে একাত্মতা
প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এটি
তার এক প্রকার নীরব
প্রতিবাদ বা আকাঙ্ক্ষা ছিল।
১২. প্রশ্ন: বাণীকণ্ঠের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল হলেও তার দুশ্চিন্তার কারণ কী ছিল?
উত্তর: বাণীকণ্ঠের সচ্ছলতা থাকলেও তার ছোট মেয়ে
সুভার বাক্প্রতিবন্ধিতা তার
দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ ছিল।
বড় দুই মেয়ের
বিয়ে তিনি সহজে দিতে
পারলেও সুভার বিয়ের জন্য কোনো পাত্র
খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সমাজের লোকনিন্দার
ভয় এবং মেয়ের ভবিষ্যতের
অনিশ্চয়তা তাকে সবসময় চিন্তিত
রাখত। আর্থিক সচ্ছলতা এই সামাজিক ও
মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করতে পারেনি।
১৩. প্রশ্ন: গোয়ালঘরের গাভী দুটি সুভার প্রতি তাদের ভালোবাসা কীভাবে প্রকাশ করত?
উত্তর: গোয়ালঘরের গাভী সর্বশী ও
পাঙ্গুলি ছিল সুভার সবচেয়ে
ঘনিষ্ঠ সঙ্গী এবং তারা নীরবে
তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করত।
সুভা যখনই গোয়ালঘরে
প্রবেশ করত, তখনই গাভী
দুটি সুভার গা ঘেঁষে দাঁড়াত
এবং আদর করে তার
গা চাটতে থাকত। তাদের এই নীরব আচরণেই
সুভা মানুষের সমাজে না পাওয়া উষ্ণ
স্নেহ ও ভালোবাসা অনুভব
করত। তারা সুভার বাকহীনতার
কোনো পরোয়া করত না।
আরো দেখুন
গণিত সাজেশন- এস এস সি (নবম) পরীক্ষা -২০২৫ (ভকেশনাল)
