প্রত্যুপকারঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
|
বিষয় |
তথ্য |
|
উপাধি |
বিদ্যাসাগর (প্রচলিত জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের জন্য
এই উপাধি লাভ করেন)। |
|
পরিচিতি |
উনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্য লেখক। তাঁকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়। |
|
সমাজ সংস্কার |
প্রধানত বিধবা বিবাহ প্রবর্তন ও বহুবিবাহ রোধ-এর জন্য আন্দোলন
করেন। |
|
শিক্ষাবিস্তার |
তিনি নারীশিক্ষার প্রসারে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন, বহু বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। |
|
উল্লেখযোগ্য রচনা |
বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা, সীতার বনবাস, আখ্যানমঞ্জরী (যেখান থেকে 'প্রত্যুপকার' গল্পটি নেওয়া হয়েছে)। |
নবম শ্রেণি গণিত: রেখা, কোণ ও ত্রিভুজ (অধ্যায় ৬) - সকল প্রমাণসহ সহজ
সমাধান
‘প্রত্যুপকার’ গল্পটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত আখ্যানমঞ্জরী গ্রন্থের একটি অংশ।
খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্র আলী ইবনে আব্বাস ছিলেন এক দয়ালু ও কৃতজ্ঞ প্রকৃতির মানুষ। একদিন খলিফা এক বন্দিকে তাঁর হাতে সোপর্দ করেন এবং বলেন—“তাকে গৃহে আটক রাখো, কাল আমার সামনে আনবে।” খলিফার রাগ দেখে আলী বুঝলেন, এই লোকের জীবন বিপদে।
বন্দিকে আলী ইবনে আব্বাস জিজ্ঞেস করলে জানলেন, তিনি ডেমাস্কাসের বাসিন্দা। আলী তখন বলেন, “ওই নগরের একজন মানুষ একবার আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিল।” আলীর সেই ঘটনা শুনে বন্দি জানতে চাইলেন, কীভাবে?
৯ম শ্রেণী (বাংলা) সমাপনী পরীক্ষার সাজেশন-২০২৫ (ভোকেশনাল)
আলী বললেন—একসময় তিনি দামেস্কে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন। শত্রুর আক্রমণে প্রাণ বাঁচাতে এক ভদ্রলোকের ঘরে আশ্রয় নেন। ভদ্রলোক তাঁকে এক মাস লুকিয়ে রাখেন, খাওয়া-দাওয়া ও নিরাপত্তা দেন। যাবার সময় ঘোড়া, খাবার, টাকা সব দিয়ে সাহায্য করেন। আলী আজও সেই উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
এ কথা শুনে বন্দি আনন্দে বললেন—“সেই মানুষটি আমি!” আলী বিস্ময়ে তাঁকে চিনলেন, তাঁকে মুক্ত করে দিলেন এবং পালিয়ে যেতে বললেন। কিন্তু উপকারী লোকটি বললেন, “আমি পালাব না, এতে তোমার ক্ষতি হবে। খলিফার কাছে গিয়ে আমার পক্ষে সুপারিশ করো।”
পরদিন আলী খলিফার সামনে সব খুলে বললেন। খলিফা প্রথমে রেগে গেলেন, কিন্তু গল্প শোনার পর বুঝলেন—যে মানুষ এত দয়ালু ও ন্যায়পরায়ণ, সে অপরাধী হতে পারে না। তাই খলিফা বন্দিকে মুক্ত করে দিলেন, উপহার দিলেন এবং দেশে ফেরার অনুমতি দিলেন।
এভাবে আলী ইবনে আব্বাস তাঁর উপকারীর প্রতি সত্যিকারের প্রত্যুপকার করলেন।
গল্পের প্রধান শিক্ষামূলক দিকগুলো
আমরা
এতক্ষন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
রচিত 'প্রত্যুপকার' গল্পের সারসংক্ষেপ আলোচনা
করলাম। এটি একটি অত্যন্ত শিক্ষণীয়
গল্প যা কৃতজ্ঞতা, দয়া ও ন্যায়পরায়ণতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
গল্পের
প্রধান শিক্ষামূলক দিকগুলো নিম্নরূপ:
- কৃতজ্ঞতা
ও প্রত্যুপকার: গল্পটি দেখায় কীভাবে আলী ইবনে আব্বাস তাঁর পুরনো উপকারী বন্ধুর প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ ছিলেন এবং বিপদকালে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সেই উপকারের প্রতিদান বা প্রত্যুপকার করলেন।
- মানবিকতা
ও দয়া: খলিফা মামুনের রাগ সত্ত্বেও আলী ইবনে আব্বাস বন্দির জীবন বাঁচাতে চাইলেন এবং তাঁর মানবিক পরিচয় জেনে তাঁকে সাহায্য করতে দ্বিধা করলেন না।
- ন্যায়পরায়ণতা
ও মহত্ত্বের স্বীকৃতি: খলিফা মামুনও শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের পথে এলেন। আলী ইবনে আব্বাসের কথা শোনার পর তিনি বুঝলেন, এমন দয়ালু ও মহৎ মানুষ অপরাধী হতে পারে না। তিনি শুধু বন্দিকে মুক্তিই দিলেন না, তাঁকে পুরস্কৃতও করলেন।
গল্পটি
প্রমাণ করে যে দয়া
ও উপকার কখনো বৃথা যায়
না, আর বিপদে অন্যের
পাশে দাঁড়ানোই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
'প্রত্যুপকার'
গল্পের গুরুত্বপূর্ণ শব্দার্থ ও টিকা
|
শব্দ/শব্দগুচ্ছ |
অর্থ |
টিকা |
|
প্রত্যুপকার |
উপকারের প্রতিদান; উপকারীর উপকার শোধ করা। |
গল্পের মূল থিম বা বিষয়বস্তু। |
|
আখ্যানমঞ্জরী |
গল্পের সমষ্টি বা সংগ্রহ। |
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত এই গ্রন্থটি বিভিন্ন
শিক্ষামূলক গল্পের সংকলন। |
|
খলিফা |
ইসলামের প্রধান ধর্মীয় ও রাজনৈতিক শাসক। |
এখানে খলিফা মামুন হলেন তৎকালীন মুসলিম জাহানের শাসক। |
|
প্রিয়পাত্র |
প্রিয় ব্যক্তি, স্নেহের বা পছন্দের মানুষ। |
আলী ইবনে আব্বাস খলিফা মামুনের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন। |
|
সোপর্দ |
কোনো কিছুর দায়িত্বে দেওয়া বা তুলে দেওয়া। |
খলিফা বন্দিকে আলীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন আটক রাখার জন্য। |
|
ডেমাস্কাস/দামেস্ক |
সিরিয়ার রাজধানী, একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নগরী। |
বন্দি এবং আলী ইবনে আব্বাসের উপকারী বন্ধু এই শহরেরই বাসিন্দা
ছিলেন। |
|
কৃতজ্ঞ |
যিনি উপকারীর উপকার স্বীকার করেন বা মনে রাখেন। |
আলী ইবনে আব্বাসের একটি প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। |
|
ন্যায়পরায়ণ |
ন্যায়নিষ্ঠ, যিনি ন্যায়বিচার মেনে চলেন। |
খলিফা মামুন শেষে ন্যায়পরায়ণতার পরিচয় দিয়েছিলেন। |
গণিত সাজেশন- এস এস সি (নবম) পরীক্ষা -২০২৫ (ভকেশনাল)
উদ্দীপক:
জনৈক জমিদার তাঁর বিশ্বস্ত প্রহরী করিমকে এক অচেনা ব্যক্তিকে আটক রাখার নির্দেশ দিলেন। করিম লোকটিকে জিজ্ঞেস করে জানল, সে সাত বছর আগে তার কঠিন অসুখের সময় বিনাপারিশ্রমিকে সেবা ও চিকিৎসা করে জীবন বাঁচিয়েছিল। নিজের উপকারীকে বন্দি দেখে করিম তাকে গোপনে মুক্ত করে দিতে চাইল, কিন্তু সেই ব্যক্তি রাজি হলেন না। পরদিন করিমের মুখে সব শুনে জমিদার সেই মহৎপ্রাণ বন্দিকে মুক্তি দিলেন এবং সম্মানিত করলেন।
প্রশ্নাবলী:
(ক) খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্রের নাম কী ছিল?
(খ) বন্দি কেন পালাতে চাইলেন না? ব্যাখ্যা করো।
(গ) উদ্দীপকে বন্দি চিকিৎসকের আচরণ 'প্রত্যুপকার' গল্পের কোন দিকটিকে তুলে ধরে? ব্যাখ্যা করো।
(ঘ) "করিম ও আলী ইবনে আব্বাস উভয়ের চরিত্রেই মানবিক মূল্যবোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রতিফলিত হয়েছে" – উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
(ক) খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্রের নাম কী ছিল?
উত্তর: খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্রের নাম ছিল আলী ইবনে আব্বাস।
(খ) বন্দি কেন পালাতে চাইলেন না? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বন্দির মহৎ হৃদয় কেবল উপকার করাই শেখায়নি, শিখিয়েছে উপকারীর মঙ্গল কামনা।
তিনি জানতেন, তাঁকে মুক্ত করে দিলে খলিফার আদেশ অমান্য করা হবে, আর তার ফলস্বরূপ করিমের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই নিজের জীবন রক্ষার চেয়েও উপকারী বন্ধু করিমের ক্ষতি না হওয়াটা তাঁর কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই আত্মসমর্পণের মধ্যে ছিল এক গভীর ন্যায়পরায়ণতা ও দূরদর্শিতা; তিনি জানতেন, সত্যের পথ অবলম্বন করলেই কেবল স্থায়ী মুক্তি সম্ভব।
(গ) উদ্দীপকে বন্দি চিকিৎসকের আচরণ 'প্রত্যুপকার' গল্পের কোন দিকটিকে তুলে ধরে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উদ্দীপকের বন্দি চিকিৎসকের আচরণ 'প্রত্যুপকার' গল্পের আত্মত্যাগ ও মানবিক মূল্যবোধের দিকটিকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরে।
আলী ইবনে আব্বাসের উপকারী বন্ধু যেমন নিজের জীবনের ভয় ত্যাগ করে আলীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তেমনি উদ্দীপকের চিকিৎসকও নিজের মুক্তির সুযোগ হেলায় হারিয়ে দিলেন, কেবল করিমের বিপদ হবে বলে।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, প্রকৃত মহত্ত্ব শুধু উপকার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং উপকারীর স্বার্থরক্ষা ও সম্মান রক্ষার মধ্যেও নিহিত। এ এক বিরল নৈতিক আদর্শ, যা নিজের জীবনের চেয়েও বন্ধুত্বের মূল্যকে বড় করে দেখে।
(ঘ) "করিম ও আলী ইবনে আব্বাস উভয়ের চরিত্রেই মানবিক মূল্যবোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রতিফলিত হয়েছে" – উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: উক্তিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সত্য।
করিম ও আলী ইবনে আব্বাস—উভয়ের চরিত্রেই দেখা যায়, ক্ষমতা বা পদমর্যাদার বাঁধাকে ডিঙিয়ে মানবিকতার জয়গান।
আলী ইবনে আব্বাস ছিলেন খলিফার প্রিয়পাত্র; তাঁর দায়িত্ব ছিল বন্দিকে আটক রাখা। কিন্তু যখনই তিনি চিনতে পারলেন বন্দিটি তাঁর প্রাণরক্ষাকারী বন্ধু, তখনই কৃতজ্ঞতার পবিত্র বন্ধন তাঁকে কর্তব্যচ্যুত করল। তিনি ঝুঁকি নিয়ে বন্ধুকে বাঁচাতে চাইলেন এবং শেষে সাহসের সঙ্গে খলিফার সামনে সত্য প্রকাশ করলেন।
অন্যদিকে, করিমও একজন সাধারণ প্রহরী হয়েও নিজের চাকরি হারানোর ভয়কে তুচ্ছ করলেন চিকিৎসকের উপকার স্মরণ করে। দুজনের এই কাজই দেখায় যে, মানুষের হৃদয়ে দয়া ও কৃতজ্ঞতার অনুভূতি কত গভীর। এই চরিত্র দুটি শিক্ষণীয় যে, জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও উপকারীর প্রতিদান দেওয়া এবং মানবিক হওয়াটাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাঁদের এই কাজই সমাজে মানবিক মূল্যবোধের এক চিরন্তন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
