ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 'প্রত্যুপকার' গল্পের বিস্তারিত সৃজনশীল সমাধান সহ (৯ম-১০ম শ্রেণি)

 

প্রত্যুপকার
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

বিষয়

তথ্য

উপাধি

বিদ্যাসাগর (প্রচলিত জ্ঞান পাণ্ডিত্যের জন্য এই উপাধি লাভ করেন)

পরিচিতি

উনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক গদ্য লেখক। তাঁকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়।

সমাজ সংস্কার

প্রধানত বিধবা বিবাহ প্রবর্তন বহুবিবাহ রোধ-এর জন্য আন্দোলন করেন।

শিক্ষাবিস্তার

তিনি নারীশিক্ষার প্রসারে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন, বহু বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

উল্লেখযোগ্য রচনা

বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা, সীতার বনবাস, আখ্যানমঞ্জরী (যেখান থেকে 'প্রত্যুপকার' গল্পটি নেওয়া হয়েছে)

নবম শ্রেণি গণিত: রেখা, কোণ ও ত্রিভুজ (অধ্যায় ৬) - সকল প্রমাণসহ সহজ
 সমাধান

‘প্রত্যুপকার’ গল্পটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত আখ্যানমঞ্জরী গ্রন্থের একটি অংশ।


খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্র আলী ইবনে আব্বাস ছিলেন এক দয়ালু ও কৃতজ্ঞ প্রকৃতির মানুষ। একদিন খলিফা এক বন্দিকে তাঁর হাতে সোপর্দ করেন এবং বলেন—“তাকে গৃহে আটক রাখো, কাল আমার সামনে আনবে।” খলিফার রাগ দেখে আলী বুঝলেন, এই লোকের জীবন বিপদে।


বন্দিকে আলী ইবনে আব্বাস জিজ্ঞেস করলে জানলেন, তিনি ডেমাস্কাসের বাসিন্দা। আলী তখন বলেন, “ওই নগরের একজন মানুষ একবার আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিল।” আলীর সেই ঘটনা শুনে বন্দি জানতে চাইলেন, কীভাবে?

৯ম শ্রেণী (বাংলা) সমাপনী পরীক্ষার সাজেশন-২০২৫ (ভোকেশনাল)

আলী বললেন—একসময় তিনি দামেস্কে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন। শত্রুর আক্রমণে প্রাণ বাঁচাতে এক ভদ্রলোকের ঘরে আশ্রয় নেন। ভদ্রলোক তাঁকে এক মাস লুকিয়ে রাখেন, খাওয়া-দাওয়া ও নিরাপত্তা দেন। যাবার সময় ঘোড়া, খাবার, টাকা সব দিয়ে সাহায্য করেন। আলী আজও সেই উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ।


এ কথা শুনে বন্দি আনন্দে বললেন—“সেই মানুষটি আমি!” আলী বিস্ময়ে তাঁকে চিনলেন, তাঁকে মুক্ত করে দিলেন এবং পালিয়ে যেতে বললেন। কিন্তু উপকারী লোকটি বললেন, “আমি পালাব না, এতে তোমার ক্ষতি হবে। খলিফার কাছে গিয়ে আমার পক্ষে সুপারিশ করো।”


পরদিন আলী খলিফার সামনে সব খুলে বললেন। খলিফা প্রথমে রেগে গেলেন, কিন্তু গল্প শোনার পর বুঝলেন—যে মানুষ এত দয়ালু ও ন্যায়পরায়ণ, সে অপরাধী হতে পারে না। তাই খলিফা বন্দিকে মুক্ত করে দিলেন, উপহার দিলেন এবং দেশে ফেরার অনুমতি দিলেন।


এভাবে আলী ইবনে আব্বাস তাঁর উপকারীর প্রতি সত্যিকারের প্রত্যুপকার করলেন।


গল্পের প্রধান শিক্ষামূলক দিকগুলো

আমরা এতক্ষন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত 'প্রত্যুপকার' গল্পের সারসংক্ষেপ  আলোচনা করলাম। এটি একটি অত্যন্ত শিক্ষণীয় গল্প যা কৃতজ্ঞতা, দয়া ন্যায়পরায়ণতার গুরুত্ব তুলে ধরে।

গল্পের প্রধান শিক্ষামূলক দিকগুলো নিম্নরূপ:

  • কৃতজ্ঞতা প্রত্যুপকার: গল্পটি দেখায় কীভাবে আলী ইবনে আব্বাস তাঁর পুরনো উপকারী বন্ধুর প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ ছিলেন এবং বিপদকালে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সেই উপকারের প্রতিদান বা প্রত্যুপকার করলেন।

  • মানবিকতা দয়া: খলিফা মামুনের রাগ সত্ত্বেও আলী ইবনে আব্বাস বন্দির জীবন বাঁচাতে চাইলেন এবং তাঁর মানবিক পরিচয় জেনে তাঁকে সাহায্য করতে দ্বিধা করলেন না।

  • ন্যায়পরায়ণতা মহত্ত্বের স্বীকৃতি: খলিফা মামুনও শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের পথে এলেন। আলী ইবনে আব্বাসের কথা শোনার পর তিনি বুঝলেন, এমন দয়ালু মহৎ মানুষ অপরাধী হতে পারে না। তিনি শুধু বন্দিকে মুক্তিই দিলেন না, তাঁকে পুরস্কৃতও করলেন।

গল্পটি প্রমাণ করে যে দয়া উপকার কখনো বৃথা যায় না, আর বিপদে অন্যের পাশে দাঁড়ানোই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম।


'প্রত্যুপকার' গল্পের গুরুত্বপূর্ণ শব্দার্থ টিকা

শব্দ/শব্দগুচ্ছ

অর্থ

টিকা

প্রত্যুপকার

উপকারের প্রতিদান; উপকারীর উপকার শোধ করা।

গল্পের মূল থিম বা বিষয়বস্তু।

আখ্যানমঞ্জরী

গল্পের সমষ্টি বা সংগ্রহ।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত এই গ্রন্থটি বিভিন্ন শিক্ষামূলক গল্পের সংকলন।

খলিফা

ইসলামের প্রধান ধর্মীয় রাজনৈতিক শাসক।

এখানে খলিফা মামুন হলেন তৎকালীন মুসলিম জাহানের শাসক।

প্রিয়পাত্র

প্রিয় ব্যক্তি, স্নেহের বা পছন্দের মানুষ।

আলী ইবনে আব্বাস খলিফা মামুনের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন।

সোপর্দ

কোনো কিছুর দায়িত্বে দেওয়া বা তুলে দেওয়া।

খলিফা বন্দিকে আলীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন আটক রাখার জন্য।

ডেমাস্কাস/দামেস্ক

সিরিয়ার রাজধানী, একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক নগরী।

বন্দি এবং আলী ইবনে আব্বাসের উপকারী বন্ধু এই শহরেরই বাসিন্দা ছিলেন।

কৃতজ্ঞ

যিনি উপকারীর উপকার স্বীকার করেন বা মনে রাখেন।

আলী ইবনে আব্বাসের একটি প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

ন্যায়পরায়ণ

ন্যায়নিষ্ঠ, যিনি ন্যায়বিচার মেনে চলেন।

খলিফা মামুন শেষে ন্যায়পরায়ণতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

গণিত সাজেশন- এস এস সি (নবম) পরীক্ষা -২০২৫ (ভকেশনাল)

উদ্দীপক:

জনৈক জমিদার তাঁর বিশ্বস্ত প্রহরী করিমকে এক অচেনা ব্যক্তিকে আটক রাখার নির্দেশ দিলেন। করিম লোকটিকে জিজ্ঞেস করে জানল, সে সাত বছর আগে তার কঠিন অসুখের সময় বিনাপারিশ্রমিকে সেবা ও চিকিৎসা করে জীবন বাঁচিয়েছিল। নিজের উপকারীকে বন্দি দেখে করিম তাকে গোপনে মুক্ত করে দিতে চাইল, কিন্তু সেই ব্যক্তি রাজি হলেন না। পরদিন করিমের মুখে সব শুনে জমিদার সেই মহৎপ্রাণ বন্দিকে মুক্তি দিলেন এবং সম্মানিত করলেন

প্রশ্নাবলী:

(ক) খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্রের নাম কী ছিল? 

(খ) বন্দি কেন পালাতে চাইলেন না? ব্যাখ্যা করো। 

(গ) উদ্দীপকে বন্দি চিকিৎসকের আচরণ 'প্রত্যুপকার' গল্পের কোন দিকটিকে তুলে ধরে? ব্যাখ্যা করো। 

(ঘ) "করিম ও আলী ইবনে আব্বাস উভয়ের চরিত্রেই মানবিক মূল্যবোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রতিফলিত হয়েছে" – উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।


সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

(ক) খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্রের নাম কী ছিল? 

উত্তর: খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্রের নাম ছিল আলী ইবনে আব্বাস


(খ) বন্দি কেন পালাতে চাইলেন না? ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: বন্দির মহৎ হৃদয় কেবল উপকার করাই শেখায়নি, শিখিয়েছে উপকারীর মঙ্গল কামনা। 

তিনি জানতেন, তাঁকে মুক্ত করে দিলে খলিফার আদেশ অমান্য করা হবে, আর তার ফলস্বরূপ করিমের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই নিজের জীবন রক্ষার চেয়েও উপকারী বন্ধু করিমের ক্ষতি না হওয়াটা তাঁর কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই আত্মসমর্পণের মধ্যে ছিল এক গভীর ন্যায়পরায়ণতা ও দূরদর্শিতা; তিনি জানতেন, সত্যের পথ অবলম্বন করলেই কেবল স্থায়ী মুক্তি সম্ভব।


(গ) উদ্দীপকে বন্দি চিকিৎসকের আচরণ 'প্রত্যুপকার' গল্পের কোন দিকটিকে তুলে ধরে? ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: উদ্দীপকের বন্দি চিকিৎসকের আচরণ 'প্রত্যুপকার' গল্পের আত্মত্যাগ ও মানবিক মূল্যবোধের দিকটিকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরে।

আলী ইবনে আব্বাসের উপকারী বন্ধু যেমন নিজের জীবনের ভয় ত্যাগ করে আলীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তেমনি উদ্দীপকের চিকিৎসকও নিজের মুক্তির সুযোগ হেলায় হারিয়ে দিলেন, কেবল করিমের বিপদ হবে বলে। 

এই ঘটনা প্রমাণ করে, প্রকৃত মহত্ত্ব শুধু উপকার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং উপকারীর স্বার্থরক্ষা ও সম্মান রক্ষার মধ্যেও নিহিত। এ এক বিরল নৈতিক আদর্শ, যা নিজের জীবনের চেয়েও বন্ধুত্বের মূল্যকে বড় করে দেখে।


(ঘ) "করিম ও আলী ইবনে আব্বাস উভয়ের চরিত্রেই মানবিক মূল্যবোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রতিফলিত হয়েছে" – উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: উক্তিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সত্য। 

করিম ও আলী ইবনে আব্বাস—উভয়ের চরিত্রেই দেখা যায়, ক্ষমতা বা পদমর্যাদার বাঁধাকে ডিঙিয়ে মানবিকতার জয়গান

আলী ইবনে আব্বাস ছিলেন খলিফার প্রিয়পাত্র; তাঁর দায়িত্ব ছিল বন্দিকে আটক রাখা। কিন্তু যখনই তিনি চিনতে পারলেন বন্দিটি তাঁর প্রাণরক্ষাকারী বন্ধু, তখনই কৃতজ্ঞতার পবিত্র বন্ধন তাঁকে কর্তব্যচ্যুত করল। তিনি ঝুঁকি নিয়ে বন্ধুকে বাঁচাতে চাইলেন এবং শেষে সাহসের সঙ্গে খলিফার সামনে সত্য প্রকাশ করলেন।

অন্যদিকে, করিমও একজন সাধারণ প্রহরী হয়েও নিজের চাকরি হারানোর ভয়কে তুচ্ছ করলেন চিকিৎসকের উপকার স্মরণ করে। দুজনের এই কাজই দেখায় যে, মানুষের হৃদয়ে দয়া ও কৃতজ্ঞতার অনুভূতি কত গভীর। এই চরিত্র দুটি শিক্ষণীয় যে, জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও উপকারীর প্রতিদান দেওয়া এবং মানবিক হওয়াটাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাঁদের এই কাজই সমাজে মানবিক মূল্যবোধের এক চিরন্তন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

'প্রত্যুপকার' গল্পের ২০টি অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১. প্রশ্ন: খলিফা মামুন বন্দিকে আলী ইবনে আব্বাসের হাতে সোপর্দ করেন কেন?

উত্তর: খলিফা মামুন বন্দিকে আলী ইবনে আব্বাসের হাতে সোপর্দ করেন কারণ তিনি ছিলেন খলিফার প্রিয়পাত্র ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি। খলিফা চেয়েছিলেন আলী বন্দিকে তাঁর গৃহে আটক রেখে পরের দিন তাঁর সামনে হাজির করবেন। খলিফার রাগ দেখে আলী বুঝেছিলেন, বন্দির জীবন বিপন্ন এবং এ জন্য তিনি বন্দিকে নিজের দায়িত্বে রেখেছিলেন।

২. প্রশ্ন: আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাস নগরের উপর শুভদৃষ্টি কামনা করেন কেন?

উত্তর: আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাস নগরের উপর শুভদৃষ্টি কামনা করেন কারণ ওই নগরের এক অধিবাসী একসময় তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। শত্রুর আক্রমণে বিপদে পড়ে আলী সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, এবং সেই ভদ্রলোক এক মাস তাঁকে লুকিয়ে রেখে, সেবা দিয়ে ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। কৃতজ্ঞতাবশতই তিনি ওই নগর ও তার অধিবাসীর কল্যাণ কামনা করেন।

৩. প্রশ্ন: আলী ইবনে আব্বাসকে দয়ালু ও কৃতজ্ঞ প্রকৃতির মানুষ বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: আলী ইবনে আব্বাসকে দয়ালু বলা হয়েছে কারণ বন্দির বিপদের কথা শুনে তিনি মানবিক কারণে তাঁকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। আর কৃতজ্ঞ বলা হয়েছে, কারণ তিনি বহু বছর পরেও নিজের উপকারীর উপকার ভোলেননি এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সেই উপকারীর প্রতিদান দিতে প্রস্তুত ছিলেন।

৪. প্রশ্ন: 'ঐ অংশের অধিবাসী এক ব্যক্তি একসময় আমার প্রাণদান দিয়াছিলেন'—উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: উক্তিটি দ্বারা উপকারীর প্রতি আলীর গভীর কৃতজ্ঞতা বোঝানো হয়েছে। আলী ইবনে আব্বাস যখন দামেস্কে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন, তখন সেখানকার একজন ভদ্রলোক তাঁকে এক মাস লুকিয়ে রেখে, খাদ্য ও নিরাপত্তা দিয়ে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেন। আলী সেই উপকারের কথা কখনোই ভোলেননি, তাই বন্দির নিবাসের কথা শুনেই তিনি সেই উপকারের কথা স্মরণ করেন।

৫. প্রশ্ন: বন্দি আনন্দিত হয়ে বললেন—'সেই মানুষটি আমি!'—কেন?

উত্তর: বন্দি আনন্দিত হয়ে এই উক্তিটি করেছিলেন কারণ তিনি জানতে পেরেছিলেন, যে ব্যক্তিকে তিনি একসময় উপকার করেছিলেন, সেই আলী ইবনে আব্বাস এখন খলিফার প্রিয়পাত্র এবং প্রভাবশালী। তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, বিপদের সময়ে তাঁর উপকার বৃথা যায়নি এবং আলী তাঁর প্রতিদান দেবেন।

৬. প্রশ্ন: বন্দি পালানোর সুযোগ পেয়েও কেন রাজি হলেন না?

উত্তর: বন্দি পালানোর সুযোগ পেয়েও রাজি হলেন না কারণ তিনি ছিলেন দূরদর্শী ও ন্যায়পরায়ণ। তিনি জানতেন, তাঁর পালানোটা খলিফার আদেশ অমান্য করা হবে এবং এর ফলে তাঁকে মুক্ত করে দেওয়া আলী ইবনে আব্বাসের ক্ষতি হতে পারে। তিনি নিজের জীবনের চেয়ে উপকারীর নিরাপত্তা ও স্বার্থকে বড় মনে করেছিলেন।

৭. প্রশ্ন: খলিফা মামুন প্রথমে রেগে গেলেও পরে শান্ত হলেন কেন?

উত্তর: খলিফা মামুন প্রথমে রেগে গিয়েছিলেন কারণ আলী ইবনে আব্বাস তাঁর আদেশ অমান্য করে বন্দিকে মুক্ত করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আলী যখন সবিস্তারে আসল ঘটনাটি (আলী ও বন্দির পুরনো সম্পর্ক এবং উপকার) খুলে বললেন, তখন খলিফা তাঁর মহত্ত্ব ও ন্যায়পরায়ণতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শান্ত হন।

৮. প্রশ্ন: খলিফা মামুন বন্দিকে মুক্ত করে দিলেন কেন?

উত্তর: খলিফা মামুন বন্দিকে মুক্ত করে দিলেন কারণ আলী ইবনে আব্বাসের মুখ থেকে বন্দির মহত্ত্বের কথা শুনে তিনি উপলব্ধি করলেন—যে মানুষ এতটা দয়ালু, উপকারকারী এবং ন্যায়পরায়ণ, সে কোনো গুরুতর অপরাধী হতে পারে না। আলী ইবনে আব্বাসের সুপারিশ এবং বন্দির চারিত্রিক মাধুর্যের কারণেই খলিফা মানবিক বিচার করেন।

৯. প্রশ্ন: 'এতে তোমার ক্ষতি হবে'—বন্দি কাকে, কেন এই কথা বলেছিলেন?

উত্তর: বন্দি এই কথাটি আলী ইবনে আব্বাসকে বলেছিলেন। বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার পর যখন আলী তাঁকে পালিয়ে যেতে বলেন, তখন বন্দি আলীর ক্ষতি হবে ভেবে রাজি হননি। বন্দি বুঝতে পেরেছিলেন, খলিফার প্রিয়পাত্র হয়েও তাঁর আদেশ অমান্য করে বন্দিকে পালাতে সাহায্য করলে আলীর নিজের জীবন বিপন্ন হতে পারে।

১০. প্রশ্ন: 'প্রত্যুপকার' গল্পে লেখক কী শিক্ষা দিতে চেয়েছেন?

উত্তর: 'প্রত্যুপকার' গল্পে লেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মূলত কৃতজ্ঞতা ও প্রত্যুপকারের মহত্ত্বের শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন, নিঃস্বার্থভাবে উপকার করলে তার ফল কখনো বৃথা যায় না এবং একজন প্রকৃত মানুষ সর্বদা উপকারীর ঋণ স্বীকার করে তা শোধ করতে প্রস্তুত থাকে।

১১. প্রশ্ন: বন্দি আলীকে তার উপকার করার ঘটনাটি কীভাবে বর্ণনা করেছিলেন?

উত্তর: বন্দি আলীকে তাঁর উপকার করার ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেছিলেন: তিনি যখন দামেস্কে শত্রুর আক্রমণে বিপন্ন হয়েছিলেন, তখন বন্দি নিজ গৃহে তাঁকে এক মাস লুকিয়ে রেখেছিলেন। এই সময়ে তিনি আলীর খাবার, নিরাপত্তা, এবং চিকিৎসা সবকিছুর ব্যবস্থা করেন। যাবার সময় তিনি আলীকে ঘোড়া, খাবার ও টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।

১২. প্রশ্ন: বন্দিকে 'ন্যায়পরায়ণ' বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: বন্দিকে ন্যায়পরায়ণ বলা হয়েছে কারণ তিনি নিজের চরম বিপদের সময়েও স্বার্থপর হননি। আলী ইবনে আব্বাস যখন তাঁকে পালানোর সুযোগ করে দেন, তখন তিনি পালাননি; কারণ এতে আলীর ক্ষতি হতে পারত। বরং তিনি খলিফার সামনে গিয়ে বিচার পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা তাঁর ন্যায়নিষ্ঠ মানসিকতার পরিচায়ক।

১৩. প্রশ্ন: খলিফার আচরণে কোন গুণের পরিচয় পাওয়া যায়?

উত্তর: খলিফার আচরণে ন্যায়পরায়ণতা, মহানুভবতা ও মহত্ত্বের গুণের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি প্রথমে রাগ দেখালেও, পরে আলীর কথা শুনে বুঝতে পারেন যে বন্দি মহৎ চরিত্রের অধিকারী। তাই তিনি কেবল বন্দিকে মুক্তিই দেননি, বরং তাকে উপহার দিয়ে সম্মানিতও করেছিলেন।

১৪. প্রশ্ন: 'আখ্যানমঞ্জরী' গ্রন্থটি কী ধরনের রচনা?

উত্তর: 'আখ্যানমঞ্জরী' গ্রন্থটি হলো শিক্ষামূলক গল্পের একটি সংকলন বা গল্প-সংগ্রহ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নীতি ও আদর্শমূলক ছোট ছোট কাহিনী এতে সংকলন করেছিলেন, যার একটি অংশ 'প্রত্যুপকার' গল্পটি।

১৫. প্রশ্ন: আলী ইবনে আব্বাসকে কেন বন্দির পক্ষে সুপারিশ করতে হয়েছিল?

উত্তর: আলী ইবনে আব্বাসকে বন্দির পক্ষে সুপারিশ করতে হয়েছিল কারণ সেই বন্দি ছিলেন আলী ইবনে আব্বাসের প্রাণরক্ষাকারী উপকারী বন্ধু। বন্দি স্বেচ্ছায় পালাতে রাজি হননি। তাই উপকারীর জীবন বাঁচাতে আলী ইবনে আব্বাস খলিফার সামনে পুরো সত্যটি তুলে ধরেন এবং মানবিক কারণে তাঁর মুক্তির জন্য সুপারিশ করেন।

১৬. প্রশ্ন: বন্দিকে উপহার দেওয়া হলো কেন?

উত্তর: বন্দিকে উপহার দেওয়া হলো কারণ খলিফা মামুন বন্দির মহত্ত্ব, উদারতা ও উপকার করার মানসিকতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। বন্দির মতো একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ যে অপরাধী হতে পারে না, তা উপলব্ধি করে খলিফা তাঁকে শুধু মুক্তিই দেননি, বরং তাঁকে সম্মানিত করার জন্য উপহার দেন।

১৭. প্রশ্ন: খলিফা বন্দিকে দেশে ফেরার অনুমতি দিলেন কেন?

উত্তর: খলিফা বন্দিকে দেশে ফেরার অনুমতি দিলেন কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, বন্দি কোনো গুরুতর অপরাধী নন; বরং তিনি একজন মহৎপ্রাণ, দয়ালু ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি। তাই তাঁকে আটক বা শাস্তি না দিয়ে তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিলেন।

১৮. প্রশ্ন: 'প্রত্যুপকার' বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: 'প্রত্যুপকার' বলতে বোঝায় উপকারীর প্রতিদান দেওয়া বা উপকারের বদলে উপকার করা। অর্থাৎ, কেউ যখন কারো উপকার করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সেই ব্যক্তিও পরে সুযোগ পেলে উপকারীর বিপদ দূর করে বা তাঁকে সাহায্য করে, এই কাজকেই প্রত্যুপকার বলে।

১৯. প্রশ্ন: আলী বন্দিকে মুক্ত করার পর তাঁকে পালিয়ে যেতে বললেন কেন?

উত্তর: আলী বন্দিকে মুক্ত করার পর তাঁকে পালিয়ে যেতে বললেন কারণ তিনি জানতেন যে, বন্দিকে খলিফার সামনে হাজির করা হলে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্ধু ও উপকারীর জীবন বাঁচাতে আলী দ্রুত তাঁকে নিরাপদে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।

২০. প্রশ্ন: গল্পের শেষে আলী ইবনে আব্বাসের কোন কাজের মাধ্যমে 'প্রত্যুপকার' শব্দটি সার্থক হয়েছে?

উত্তর: গল্পের শেষে আলী ইবনে আব্বাস নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দির জীবন রক্ষা করার মাধ্যমে 'প্রত্যুপকার' শব্দটি সার্থক করেছেন। বন্দি একসময় তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন, আর আলী ঠিক সেই বিপদকালেই তাঁর উপকারীর মৃত্যুদণ্ড ঠেকিয়ে এবং তাঁর মুক্তি নিশ্চিত করে সেই উপকারের শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেন।


'প্রত্যুপকার' গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (২ প্যারা বিন্যাস)

১. প্রশ্ন: খলিফা মামুন বন্দিকে আলী ইবনে আব্বাসের হাতে সোপর্দ করেন কেন?

উত্তর: খলিফা মামুন বন্দিকে আলী ইবনে আব্বাসের হাতে সোপর্দ করেন, কারণ আলী ছিলেন খলিফার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ও বিশ্বস্ত ভৃত্য। খলিফার নির্দেশ ছিল, বন্দিকে আলীর বাসস্থানে আটক রেখে পরের দিন তাঁর সম্মুখে হাজির করা হবে।

খলিফার চরম ক্রোধ ও কঠোর মনোভাব দেখে আলী বুঝতে পারেন যে এই লোকটির জীবন বিপন্ন। তাই বন্দিকে আলীর হাতে সোপর্দ করার মাধ্যমে খলিফা মূলত বন্দির প্রতি নিরাপত্তা ও যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, যদিও আলীর মনে বন্দির প্রতি দয়া জাগার পথ এতে তৈরি হয়।


২. প্রশ্ন: আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাস নগরের উপর শুভদৃষ্টি কামনা করেন কেন?

উত্তর: আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাস নগরের উপর শুভদৃষ্টি কামনা করেন, কারণ ঐ নগরের একজন অধিবাসী একসময় তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। শত্রুর আক্রমণে বিপন্ন আলী সেখানে আশ্রয় নিলে সেই ভদ্রলোক তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে লুকিয়ে রেখেছিলেন।

এই কামনা উপকারীর প্রতি আলীর গভীর কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করে। তিনি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত উপকারীকে নয়, তাঁর সেই আশ্রয়দানকারী নগরীটিরও কল্যাণ চেয়েছিলেন। এই উক্তি প্রমাণ করে যে আলী ইবনে আব্বাস উপকারীর ঋণ কখনো ভোলেননি।


৩. প্রশ্ন: আলী ইবনে আব্বাসকে দয়ালু ও কৃতজ্ঞ প্রকৃতির মানুষ বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: আলী ইবনে আব্বাস দয়ালু কারণ বন্দির আসন্ন বিপদের কথা (মৃত্যুদণ্ড) বুঝতে পেরে তিনি তাকে সাহায্য করার জন্য সচেষ্ট হন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি বন্দিকে মুক্ত করে দিতে চেয়েছিলেন, যা তাঁর মানবিক হৃদয়ের পরিচয় দেয়।

অন্যদিকে, তিনি কৃতজ্ঞ, কারণ বহু বছর আগে দামেস্কের এক ভদ্রলোক তাঁর জীবন রক্ষা করেছিলেন; সেই উপকার তিনি ভোলেননি। উপকারীর জীবন বিপন্ন জেনে তিনি প্রত্যুপকারের দায়বদ্ধতা অনুভব করেন। এই দুটি গুণই তাঁর চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছে।


৪. প্রশ্ন: 'ঐ অংশের অধিবাসী এক ব্যক্তি একসময় আমার প্রাণদান দিয়াছিলেন'—উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: উক্তিটি দ্বারা আলী ইবনে আব্বাসের জীবন রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং তাঁর উপকারীর প্রতি অবিচল কৃতজ্ঞতা বোঝানো হয়েছে। বিপদে পড়ে দামেস্কে আশ্রয় নিলে সেই ভদ্রলোক তাঁকে এক মাস ধরে খাদ্য, নিরাপত্তা ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।

এই ঘটনার স্মৃতিচারণ প্রমাণ করে যে আলী তাঁর সেই উপকারের ঋণ মনে রেখেছিলেন। বন্দির নিবাসের কথা শুনেই তিনি সেই উপকারীর কথা স্মরণ করেন এবং বন্দির জীবন বাঁচাতে সচেষ্ট হন।


৫. প্রশ্ন: বন্দি আনন্দিত হয়ে বললেন—'সেই মানুষটি আমি!'—কেন?

উত্তর: বন্দি আনন্দিত হন, কারণ তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে জানতে পারেন যে, যাকে তিনি উপকার করেছিলেন, সেই ব্যক্তিটি বর্তমানে খলিফার প্রিয়পাত্র ও অত্যন্ত প্রভাবশালী। জীবনের চরমতম বিপদের মুখে তিনি এক অবিশ্বাস্য সহায়তার সন্ধান পান।

বন্দি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, তাঁর উপকার বৃথা যায়নি। এখন এই প্রভাবশালী বন্ধুর সাহায্যে তিনি তাঁর জীবন রক্ষা করতে পারবেন। এই আনন্দ ছিল উপকার করার ফল প্রাপ্তির প্রাথমিক উপলব্ধি।


৬. প্রশ্ন: বন্দি পালানোর সুযোগ পেয়েও কেন রাজি হলেন না?

উত্তর: বন্দি পালানোর সুযোগ পেয়েও রাজি হননি, কারণ তিনি ছিলেন অত্যন্ত নীতিবান ও দূরদর্শী। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, খলিফার আদেশ অমান্য করে তাঁকে পালাতে সাহায্য করলে আলী ইবনে আব্বাসের নিজের জীবন বিপন্ন হতে পারে।

এই সিদ্ধান্ত তাঁর মহত্ত্ব প্রমাণ করে। নিজের জীবনের চেয়েও তিনি উপকারীর মঙ্গলের কথা ভেবেছিলেন। তিনি পালানোর বদলে খলিফার সামনে গিয়ে সত্য বলার এবং আলীর সুপারিশের মাধ্যমে সম্মানজনকভাবে মুক্তি পাওয়ার পথ বেছে নিতে বলেন।


৭. প্রশ্ন: খলিফা মামুন প্রথমে রেগে গেলেও পরে শান্ত হলেন কেন?

উত্তর: খলিফা মামুন প্রথমে রেগে গিয়েছিলেন, কারণ আলী ইবনে আব্বাস বন্দিকে লুকিয়ে রেখে তাঁকে পালাতে সাহায্য করার কথা বলে খলিফার নির্দেশ অমান্য করেছিলেন। খলিফার কাছে এটি ছিল চরম ঔদ্ধত্য।

কিন্তু আলী যখন বন্দির মহত্ত্বের পরিচয় এবং তাঁদের পুরনো সম্পর্কের আসল ঘটনাটি তুলে ধরেন, তখন খলিফার ন্যায়পরায়ণতা জেগে ওঠে। তিনি বুঝতে পারেন, যে মানুষ এত দয়াশীল, সে অপরাধী হতে পারে না। এই মানবিক উপলব্ধিই তাঁকে শান্ত করে।


৮. প্রশ্ন: খলিফা মামুন বন্দিকে মুক্ত করে দিলেন কেন?

উত্তর: খলিফা মামুন বন্দিকে মুক্ত করে দেন কারণ তিনি আলী ইবনে আব্বাসের মুখ থেকে বন্দির মহত্ত্ব, উদারতা ও উপকার করার কথা শুনেছিলেন। খলিফা উপলব্ধি করেন, এমন গুণসম্পন্ন ব্যক্তি কোনো গুরুতর অপরাধী হতে পারে না।

এই মুক্তি ছিল ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত জয়। খলিফা তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগের চেয়ে মানবতার জয়কে গুরুত্ব দিলেন। আলী ইবনে আব্বাসের সুপারিশ এবং বন্দির চারিত্রিক মাধুর্যই তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করে।


৯. প্রশ্ন: 'এতে তোমার ক্ষতি হবে'—বন্দি কাকে, কেন এই কথা বলেছিলেন?

উত্তর: বন্দি এই কথাটি আলী ইবনে আব্বাসকে বলেছিলেন। বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার পর যখন আলী তাঁকে পালিয়ে যেতে বলেন, তখন বন্দি আলীর ক্ষতির আশঙ্কায় আপত্তি জানিয়েছিলেন।

বন্দি বুঝতে পেরেছিলেন যে, খলিফার প্রিয়পাত্র হয়েও তাঁর নির্দেশ অমান্য করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিকে পালাতে সাহায্য করলে আলীর ওপর খলিফা চরমভাবে রুষ্ট হবেন এবং আলীর নিজের জীবনে বিপদ নেমে আসতে পারে। এটি বন্দির মহত্ত্ব ও উপকারীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে।


১০. প্রশ্ন: 'প্রত্যুপকার' গল্পে লেখক কী শিক্ষা দিতে চেয়েছেন?

উত্তর: 'প্রত্যুপকার' গল্পে লেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মূলত কৃতজ্ঞতা, প্রত্যুপকার ও মহত্ত্বের শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। গল্পটি শেখায় যে, নিঃস্বার্থভাবে উপকার করলে তার ফল কখনো বৃথা যায় না, বরং তা অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরে আসে।

এছাড়াও, গল্পটি দেখায় যে মানবিক মূল্যবোধ এবং উপকারীর ঋণ স্বীকার করা মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। আলী ইবনে আব্বাস নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বন্ধুর উপকার করে সেই শিক্ষাকেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন।


১১. প্রশ্ন: বন্দি আলীকে তার উপকার করার ঘটনাটি কীভাবে বর্ণনা করেছিলেন?

উত্তর: বন্দি আলীকে উপকার করার ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেছিলেন: একসময় আলী দামেস্কে শত্রুর আক্রমণে বিপন্ন হয়ে তাঁর গৃহে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন তিনি আলীকে এক মাস ধরে গোপনে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

এই সময়ে তিনি আলীর খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই নয়, বিদায়কালে তিনি আলীকে ঘোড়া, খাবার ও টাকা দিয়ে সাহায্য করেন, যেন তিনি নিরাপদে নিজ দেশে ফিরতে পারেন। এটি ছিল সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ সেবা।


১২. প্রশ্ন: বন্দিকে 'ন্যায়পরায়ণ' বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: বন্দিকে ন্যায়পরায়ণ বলা হয়েছে কারণ তিনি নিজের জীবনের চরম বিপদের মুখেও নীতি ও ন্যায়কে বিসর্জন দেননি। আলী ইবনে আব্বাস যখন তাঁকে পালানোর সুযোগ দেন, তখন তিনি আলীর ক্ষতির কথা ভেবে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সত্যের আশ্রয় নিলে হয়তো শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাওয়া যেতে পারে। এই সিদ্ধান্ত তাঁর স্বার্থহীনতা ও সঠিক পথে থাকার মানসিকতার পরিচায়ক, যা তাঁকে ন্যায়পরায়ণ করে তুলেছে।


১৩. প্রশ্ন: খলিফার আচরণে কোন গুণের পরিচয় পাওয়া যায়?

উত্তর: খলিফার আচরণে ন্যায়পরায়ণতা ও মহানুভবতার গুণের পরিচয় পাওয়া যায়। যদিও শুরুতে তিনি রেগে গিয়েছিলেন, কিন্তু আলী ইবনে আব্বাসের মুখ থেকে সত্য ঘটনা শোনার পর তিনি মানবিকতার কাছে মাথা নত করেন

তিনি শুধু বন্দিকে মুক্তিই দেননি, বরং উপহার দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন যে একজন শাসক হিসেবে তিনি ক্ষমতার চেয়ে ন্যায় ও মহত্ত্বকে বেশি গুরুত্ব দেন।


১৪. প্রশ্ন: 'আখ্যানমঞ্জরী' গ্রন্থটি কী ধরনের রচনা?

উত্তর: 'আখ্যানমঞ্জরী' গ্রন্থটি হলো শিক্ষামূলক গল্প বা আখ্যানের সংকলন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নীতি ও আদর্শভিত্তিক বিভিন্ন কাহিনী এতে সংকলন করেছিলেন, যা পাঠকদের চরিত্র গঠনে সহায়তা করে।

এই গ্রন্থটি মূলত উপদেশমূলক ছোট ছোট ঘটনার সমন্বয়। 'প্রত্যুপকার' গল্পটি সেই সংকলনেরই একটি অংশ, যার মাধ্যমে লেখক কৃতজ্ঞতাবোধের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।


১৫. প্রশ্ন: আলী ইবনে আব্বাসকে কেন বন্দির পক্ষে সুপারিশ করতে হয়েছিল?

উত্তর: আলী ইবনে আব্বাসকে বন্দির পক্ষে সুপারিশ করতে হয়েছিল, কারণ সেই বন্দি ছিলেন তাঁর প্রাণরক্ষাকারী বন্ধু ও উপকারী। বন্দি নিজে পালাতে রাজি হননি, কারণ তিনি আলীর ক্ষতি হোক তা চাননি।

ফলে আলী বুঝতে পারেন, বন্ধুকে বাঁচাতে হলে একমাত্র পথ হলো খলিফার সামনে সত্য প্রকাশ করা। নিজের উপকারীর প্রতি ঋণ শোধের দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি সাহসের সঙ্গে তাঁর পক্ষে সুপারিশ করেন।


৯ম শ্রেণী (বাংলা) সমাপনী পরীক্ষার সাজেশন-২০২৫ (ভোকেশনাল)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন