উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন প্রবন্ধের সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনিও প্রশ্ন -উত্তর ।

 

উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন প্রবন্ধের সৃজনশীল  ও বহুনির্বাচনিও  প্রশ্ন -উত্তর ।

সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনী প্রশ্ন উত্তর। নবম দশম। উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন।
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আজকের সেশনে তোমাদের স্বাগত। আমরা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 'প্রত্যুপকার' গল্প থেকে মানবিক ঋণের শিক্ষা এবং বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে আলোচনা শেষ করেছি। আজ আমরা সেই আলোচনাকে আরও ফলপ্রসূ করতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী প্রবন্ধ 'উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন'-এর গভীরে প্রবেশ করব। এই পর্বে প্রবন্ধটির উপর ভিত্তি করে তৈরি সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন-উত্তর বিশ্লেষণ করা হবে, যার মাধ্যমে তোমরা একদিকে যেমন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবে, তেমনি নজরুলের সাম্যবাদী চেতনার মূল দিকটিও অনুধাবন করতে সক্ষম হবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: উপেক্ষিত শক্তিরউদ্‌বোধন

উদ্দীপক

মফস্বলের যুবক সবুজ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও শহরের অভিজাত সমাজে কোনো সম্মান পেল না। বরং তার গ্রামের বাড়ি, দরিদ্র কৃষক বাবা ও অনাড়ম্বর জীবন নিয়ে সে সর্বত্র অপমানিত হলো। একদিন সে শহরের বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে গ্রামে ফিরে এলো। সেখানে সে দেখল, কৃষকরা ঋণের দায়ে জর্জরিত, কিন্তু তাদের মাঝে অপার শক্তি ও সাহস লুকানো আছে। সবুজ তার বাবার মতোই সাধারণ লুঙ্গি-শার্ট পরে কৃষকদের সাথে মাঠে নামল, তাদের হাতে হাত রাখল এবং তাদের সমস্যার সমাধানে পাশে দাঁড়াল। কয়েক মাসের মধ্যেই সেই কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্থানীয় মহাজনদের অত্যাচার রুখে দিল এবং সমবায়ের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাল।

 

প্রশ্নমালা 

ক) নজরুলের মতে, তথাকথিত 'ছোটোলোক'-এর অন্তর কেমন?

খ) "অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান" – উক্তিটির অর্থ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা করো। গ) উদ্দীপকের সবুজের গ্রামের দিকে ফিরে আসা এবং কৃষকদের জাগিয়ে তোলার মধ্যে "উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন" প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ) "যদি পার, এমনি করিয়া ডাকো, এমনি করিয়া এই উপেক্ষিত শক্তির বোধন করো – দেখিবে ইহারাই দেশে যুগান্তর আনিবে, অসাধ্য সাধন করিবে।" – উদ্দীপক ও প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

 

উত্তরমালা

) জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

নজরুলের মতে, তথাকথিত 'ছোটোলোক'-এর অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ, সরল উদার

 

) অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

রবীন্দ্রনাথের এই উক্তিটির অর্থ হলো, সমাজের আভিজাত্যগর্বিত সম্প্রদায় যদি বৃহত্তর জনশক্তিকে (তথাকথিত 'ছোটোলোক') ঘৃণা অপমান করে পিছিয়ে রাখে, তবে একসময় সেই অপমানকারী জাতি হিসেবে দুর্বল হয়ে পড়বে

এই দুর্বলতা বা 'অধঃপতন'-এর ফলস্বরূপ, একসময় ভদ্র সমাজও তাদের অবহেলিত অংশের সমপর্যায়ের হয়ে যাবে। অর্থাৎ, দেশের একাংশকে দুর্বল করে রেখে সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয়অপমানকারী অপমানিত উভয়েই একই শোচনীয় পরিণতি ভোগ করে সমান হবে।

 

) প্রয়োগমূলক প্রশ্ন

উদ্দীপকের সবুজের গ্রামের দিকে ফিরে আসা এবং কৃষকদের জাগিয়ে তোলার মধ্যে প্রবন্ধের আভিজাত্য ত্যাগ করে জনশক্তির সঙ্গে একাত্ম হওয়া এবং তাদের সুপ্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোলার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

সবুজ শহরে অপমানিত হয়ে তার শিক্ষিত হওয়ার অহংকার ত্যাগ করে সাধারণ পোশাকে (দীন বসন) কৃষকদের পাশে মাঠে নামে। সবুজের এই একাত্মতা নজরুলের সেই আহ্বানের সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে তিনি 'ভাই বলিয়া কোল' দেওয়ার কথা বলেছেন।

সবুজের আন্তরিকতা কৃষকদের মধ্যে লুকানো বিরাট বিপুল শক্তি জাগিয়ে তোলে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহাজনদের অত্যাচার রুখে দেয়, যা তাদের 'উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন'-কে প্রমাণ করে।

 

) উচ্চতর চিন্তন দক্ষতা প্রশ্ন

প্রবন্ধ উদ্দীপকের আলোকে উক্তিটি সম্পূর্ণরূপে যথার্থ এই উক্তিটি জাতীয় মুক্তি জাগরণের মূলমন্ত্র।

প্রথমত, নজরুল দেখিয়েছেন যে ভণ্ড ভদ্রলোকের কথার ফুলঝুরি দ্বারা দেশ উদ্ধার সম্ভব নয়, কারণ তাদের কার্য করিবার শক্তি নেই একমাত্র দেশের সরল শক্তিশালী উপেক্ষিত জনগণের দ্বারাই কঠিন কাজ সম্ভব।

দ্বিতীয়ত, মহাত্মা গান্ধী তাঁর আভিজাত্য ত্যাগ করে এবং সাধারণের সঙ্গে মিশে স্নেহ ভালোবাসার 'বোধন-বাঁশি' বাজিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, কোটি কোটি মানুষ একত্রিত হয়ে স্বাধীনতার 'অসাধ্য সাধন' করেছিল।

তৃতীয়ত, উদ্দীপকেও সবুজ যখন আন্তরিকভাবে কৃষকদের পাশে দাঁড়ায়, তখন তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহাজনদের অত্যাচার রুখে দেয় এবং নিজেদের অবস্থার উন্নতি করে। এই সংগঠিত পরিবর্তনটিই হলো সেই 'যুগান্তর'

সুতরাং, ঘৃণা বৈষম্য দূর করে জনশক্তিকে হৃদয় দিয়ে আহ্বান করতে পারলেই তাদের মধ্যে সুপ্ত ক্ষমতা জাগ্রত হবে, যা দেশকে অবশ্যই অসাধ্য সাধন এবং 'যুগান্তর' এনে দেবে।

অবশ্যই। আপনার অনুরোধ অনুসারে, 'উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন' প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নগুলো বোল্ড করে এবং উত্তরগুলো প্লেইন টেক্সটে নিচে দেওয়া হলো:

 

উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন ( জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর)

ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (১৫টি)

১. প্রশ্ন: 'উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন' প্রবন্ধটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?

উত্তর: এটি 'যুগবাণী' নামক প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

২. প্রশ্ন: প্রবন্ধটি কে লিখেছেন?

উত্তর: প্রবন্ধটি লিখেছেন কাজী নজরুল ইসলাম।

৩. প্রশ্ন: নজরুল ইসলাম কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: তিনি ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

৪. প্রশ্ন: নজরুল ইসলাম কোন শতকের কবি?

উত্তর: তিনি বিশ শতকের কবি।

৫. প্রশ্ন: লেখক কোন শক্তিকে উদ্‌বোধন করতে চেয়েছেন?

 উত্তর: লেখক দেশের উপেক্ষিত বা অবহেলিত জনসাধারণকে উদ্‌বোধন করতে চেয়েছেন।

৬. প্রশ্ন: সমাজে কারা ছোট হয়ে আছে?

উত্তর: সমাজে তথাকথিত ছোটলোক বা নিম্নশ্রেণির মানুষেরা ছোট হয়ে আছে।

৭. প্রশ্ন: 'ছোটদের' দলে যোগ দিতে লেখক কাদের আহ্বান জানিয়েছেন?

 উত্তর: লেখক তথাকথিত 'বড়দের' আহ্বান জানিয়েছেন।

৮. প্রশ্ন: প্রাবন্ধিকের মতে, দেশের সকল ঐক্যের মূল কিসে?

 উত্তর: দেশের সকল ঐক্যের মূল হলো এই উপেক্ষিত জনশক্তি।

৯. প্রশ্ন: কিসের অভাবে এতকাল আমাদের দেশের কোনো উন্নতি হয়নি?

 উত্তর: উপেক্ষিত জনগণের শক্তিকে কাজে লাগাতে না পারার অভাবে।

১০. প্রশ্ন: লেখক কাদের 'কমলার বাগান' বলে উল্লেখ করেছেন?

 উত্তর: লেখক ভদ্র সম্প্রদায়কে 'কমলার বাগান' বলে উল্লেখ করেছেন।

১১. প্রশ্ন: লেখক কাদের 'নগন্য' বলে মনে করেন?

উত্তর: যারা শুধু নিজেদের স্বার্থ ও বিলাসিতায় মগ্ন, তাদের।

১২. প্রশ্ন: দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি কোনটি?

 উত্তর: দেশের উপেক্ষিত জনশক্তি বা সাধারণ মানুষ।

১৩. প্রশ্ন: সমাজের তথাকথিত 'বড়লোক' কারা?

উত্তর: সমাজে যারা অর্থ, প্রতিপত্তি ও বংশমর্যাদায় এগিয়ে।

১৪. প্রশ্ন: প্রাবন্ধিকের মতে, কিসে দেশের সর্বাপেক্ষা মঙ্গল নিহিত?

উত্তর: ছোটদের সাথে বড়দের সম্মিলিত হওয়ার মধ্যে।

১৫. প্রশ্ন: 'আজ আমাদের দেশের সর্বাপেক্ষা আবশ্যক' কী?

উত্তর: হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য।

 

. অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর (১৫টি) - (+১=২ প্যারার বিন্যাসে)

. প্রশ্ন: "দেশের পঁচানব্বই জনই যাদের দলে, সেই উপেক্ষিত শক্তিকে উপেক্ষা করিয়া আমরা দেশের দশজনের কার্যোদ্ধার করিতে চাই।" —ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উক্তিটির মাধ্যমে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনশক্তিকে বাদ দিয়ে দেশের সামগ্রিক উন্নতি অসম্ভব।

দেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগই হলো সাধারণ জনতা বা উপেক্ষিত শ্রেণি; এই বৃহৎ শক্তিকে উপেক্ষা করে শুধু মুষ্টিমেয় শিক্ষিত সচ্ছল শ্রেণির দ্বারা দেশের কোনো বৃহৎ কার্য বা উন্নতি সম্ভব নয়। এই উপেক্ষা দেশের অগ্রগতির প্রধান বাধা, যা জাতির সর্বনাশ ডেকে আনছে।

. প্রশ্ন: "কমলার বাগান পরিপক্ক হইয়া উঠিলে তাহার রস যদি গিয়া পড়ে শুষ্ক মাটির উপর, তবে সেই রস কি কমলার বাগানের কোনো কাজে আসে?" —এর দ্বারা লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: লেখক এখানে ভদ্র সম্প্রদায়কে কমলার বাগান এবং উপেক্ষিত জনতাকে শুষ্ক মাটির সঙ্গে তুলনা করেছেন।

লেখক বোঝাতে চেয়েছেন, ভদ্র সম্প্রদায় নিজেদের বিলাসিতা সুখের জন্য জ্ঞান, বুদ্ধি বা অর্থ ব্যবহার করলে তা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কোনো কাজে আসে না। দেশের উন্নতি করতে হলে সকল শ্রেণির মানুষের জ্ঞান সম্পদকে একত্রিত করে বৃহত্তর জনসাধারণের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।

. প্রশ্ন: লেখক কেন দেশের 'ছোটলোকদের' ভাই বলে সম্বোধন করেছেন?

উত্তর: লেখক সাম্যবাদী চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে দেশের বৃহত্তর জনশক্তিকে একত্রিত করার জন্যই ছোটলোকদের ভাই বলে সম্বোধন করেছেন।

তিনি মনে করতেন, মানুষ হিসেবে সবাই সমান, তাই ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ সকল ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া উচিত। দেশের বৃহত্তর জনশক্তিকে একীভূত করে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।

. প্রশ্ন: "তোমাদের উপেক্ষার দৃষ্টিতে অমৃতের পুত্রেরা কেন মরিতে চলিল?" —কথাটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উক্তিটি দিয়ে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে তথাকথিত বড়দের অবহেলা ঘৃণার কারণেই সাধারণ মানুষের সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে।

মানুষগুলো অমৃতের পুত্র বা মহৎ সম্ভাবনার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও, সমাজের অবজ্ঞা বৈষম্যের কারণে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই সামাজিক উপেক্ষা তাদের আত্মমর্যাদা জীবনশক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

. প্রশ্ন: 'বড়দের' দলে যোগ দিতে লেখক তথাকথিত 'ছোটদের' কেন আহ্বান জানাননি?

উত্তর: লেখক 'ছোটদের' দলে যোগ দিতে 'বড়দের' আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ ছোটরাই হলো দেশের মূল বৃহত্তম শক্তি।

সাধারণ জনগণ (ছোটরা) সবসময়ই ঐক্যবদ্ধ এবং সংখ্যায় বিপুল। বড়রা যদি নিজেদের অহংকার ত্যাগ করে এই বৃহত্তর জনশক্তিতে মিশে যায়, তবেই সমাজের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল হবে এবং সত্যিকারের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

. প্রশ্ন: 'ছোট' এবং 'ছোটলোক' শব্দ দুটির মধ্যে লেখকের দৃষ্টিতে পার্থক্য কী?

উত্তর: লেখকের দৃষ্টিতে 'ছোট' হলো তারা যারা সংখ্যায় বা পদে সামান্য হলেও অন্তরে মহৎ, আর 'ছোটলোক' হলো অহংকারী বিত্তবানেরা।

এখানে 'ছোট' বলতে সাধারণ, সরল বৃহৎ জনতাকে বোঝানো হয়েছে। অন্যদিকে, 'ছোটলোক' বলতে সেই সব মানুষ যারা নিজেদের অর্থ-বিত্ত নিয়ে অহংকারী এবং অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করে, তাদের বোঝানো হয়েছে।

. প্রশ্ন: দেশের উন্নতির জন্য 'আত্মশক্তির' উদ্বোধন প্রয়োজন কেন?

উত্তর: দেশের জনগণের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে নিজেদের সম্মিলিত ক্ষমতাকে জাগিয়ে তোলার জন্যই আত্মশক্তির উদ্বোধন প্রয়োজন।

দেশের জনগণ যদি নিজেদের শক্তি মূল্য না বোঝে, তবে তারা পরাধীন থাকবে এবং সামাজিক বৈষম্যের শিকার হবে। সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে ঐক্যবদ্ধ হলেই মুক্তি উন্নতি সম্ভব।

. প্রশ্ন: "তাহারাই দেশের প্রাণ; আর আমাদের এই শিক্ষিত জনসমাজে সেই প্রাণশক্তিকে জাগাইয়া দিবার জন্যেই আমি আজ 'বড়দের' দল ছাড়িয়া 'ছোটদের' দলে ভিড়িয়াছি।"—ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: লেখক মনে করেন, দেশের সাধারণ উপেক্ষিত জনতাই হলো দেশের প্রাণ বা আসল চালিকাশক্তি।

শিক্ষিত বিত্তবান সমাজ নিজেদের অহংকার স্বার্থপরতার কারণে এই প্রাণশক্তিকে অবহেলা করেছে। তাই এই বিপুল জনশক্তিকে সংগঠিত উদ্বুদ্ধ করার জন্য লেখক শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধি হয়েও স্বেচ্ছায় সাধারণ মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

. প্রশ্ন: "মানুষে মানুষে যে একটা আন্তরিকতা ভ্রাতৃত্বের সম্বন্ধতাহারই অভাব আমাদের এই হতভাগ্য দেশটাকে আজ শতধা খণ্ড করিয়াছে।" —কেন বলা হয়েছে?

উত্তর: ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি বা অর্থগত পার্থক্য ভুলে মানুষ যদি একে অপরের প্রতি সহমর্মী না হয়, তবে সেই সমাজে বিভেদ অনিবার্য।

এই প্রবন্ধে উচ্চ-নীচ, ধনী-গরীবের মধ্যে আন্তরিকতার অভাবই দেশের ঐক্যকে নষ্ট করেছে। এই বিভেদ দেশটাকে বহু ভাগে বিভক্ত দুর্বল করে রেখেছে।

১০. প্রশ্ন: "ছোটকে বড় করিয়া তোলার সহজ উপায়ছোটর হাতে হাত মিলাইয়া দেওয়া।" —উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: উক্তিটির মাধ্যমে লেখক সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং ছোটদের সম্মান প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।

ছোটকে বড় করে তোলার অর্থ তাদের অর্থনৈতিকভাবে বড় করে তোলা নয়, বরং তাদের সম্মান আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। আর এটি সম্ভব হবে যখন তথাকথিত 'বড়' মানুষজন তাদের অহমিকা ত্যাগ করে 'ছোটদের' সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করবে এবং তাদের সম্মান দেবে।

১১. প্রশ্ন: "আমাদের এই ঋষিতুল্য দরিদ্র্যের মাঝখানেও যে মহামানবের আগমন হইতে পারে, কথা আমরা বিশ্বাস করিতে পারি না।" —ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে, সমাজ সাধারণত দরিদ্রকে তুচ্ছ মনে করে এবং তাদের মধ্যে মহৎ সম্ভাবনা দেখতে পায় না।

সমাজের বদ্ধমূল ধারণা হলো, কেবল ধনী সুবিধাভোগী শ্রেণির মধ্যেই প্রতিভাবান বা মহৎ মানুষ জন্ম নিতে পারে। এই ভ্রান্ত ধারণার কারণে আমরা দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে লুকিয়ে থাকা মহামানবীয় গুণাবলি সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিতে পারি না।

১২. প্রশ্ন: 'আমরা এতকাল যে ভ্রান্ত ধারণা লইয়া দেশকে চূর্ণবিচূর্ণ করিয়াছি'— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: এই 'ভ্রান্ত ধারণা' হলোকেবল ধনী, শিক্ষিত বা অভিজাত শ্রেণির লোকেরাই দেশের কাজের যোগ্য।

এই ভুল ধারণা নিয়ে চলা এবং বৃহৎ জনশক্তিকে অবহেলা করার কারণেই দেশের ঐক্য নষ্ট হয়েছে। এই ভ্রান্ত ধারণা দেশের অগ্রগতিকে ব্যাহত করেছে এবং জাতিকে দুর্বল করেছে।

১৩. প্রশ্ন: মানবধর্ম বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: মানবধর্ম বলতে লেখক সকল মানুষের প্রতি সমান শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং মানবিক মূল্যবোধকে বুঝিয়েছেন।

ধর্ম বা জাতি পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা, তাদের প্রতি সমবেদনা ভ্রাতৃত্ব দেখানোই হলো আসল মানবধর্ম।

১৪. প্রশ্ন: "এই ছোট ছোট ঘরগুলিও যে আজ এক-একটি দুর্গ, সে কথা আমরা ভুলিয়া গিয়াছি।" —'ছোট ঘর' দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: এখানে 'ছোট ঘর' বলতে সাধারণ গরিব মানুষের ছোট বাসস্থান বা বস্তিকে বোঝানো হয়েছে।

লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে এই সাধারণ মানুষেরাই হলো দেশের মূল শক্তি রক্ষাকবচ। সংখ্যায় বিপুল হওয়ার কারণে তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দেশের স্বাধীনতা নিরাপত্তার জন্য দুর্গের মতো শক্তিশালী ভিত্তি দিতে পারে।

১৫. প্রশ্ন: লেখক কেন মনে করেন, 'ছোট' এবং 'বড়' মধ্যে মিলন ঘটালে দেশের পঁচানব্বই জন মানুষ মুক্তি পাবে?

উত্তর: লেখক মনে করেন, পঁচানব্বই জন মানুষ হলো দেশের উপেক্ষিত জনগণ যারা সামাজিক বৈষম্যের শিকার।

যখন তথাকথিত 'বড়' বা সুবিধাভোগী শ্রেণি তাদের অহংকার ত্যাগ করে 'ছোটদের' সাথে একাত্ম হবে, তখন শ্রেণীগত বৈষম্য দূর হবে। এই ঐক্যই সাধারণ মানুষকে সামাজিক মানসিক মুক্তি এনে দেবে।

 

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর নির্দিষ্ট ফরমেটে নিচে দেওয়া হলো:

১. 'উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌বোধন' প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত?

ক) রুদ্র-মঙ্গল

খ) দুর্দিনের যাত্রী

 গ) যুগবাণী

ঘ) রাজবন্দীর জবানবন্দী

সঠিক উত্তর: গ) যুগবাণী

২. লেখক কাদের উদ্‌বোধন করতে চেয়েছেন?

ক) ধনী সম্প্রদায়কে

খ) শিক্ষিত সমাজকে

গ) উপেক্ষিত জনসাধারণকে

ঘ) রাজনীতিবিদদের

সঠিক উত্তর: গ) উপেক্ষিত জনসাধারণকে

৩. লেখকের মতে, দেশের শতকরা কতজন লোক উপেক্ষিত?

ক) নব্বই জন

 খ) পঁচানব্বই জন

 গ) আশি জন

 ঘ) নিরানব্বই জন

সঠিক উত্তর: খ) পঁচানব্বই জন

৪. লেখক কাদের 'কমলার বাগান' বলে উল্লেখ করেছেন?

 ক) চাষী সম্প্রদায়কে

 খ) শ্রমিক শ্রেণিকে

গ) ভদ্র সম্প্রদায়কে

ঘ) ছাত্র সমাজকে

সঠিক উত্তর: গ) ভদ্র সম্প্রদায়কে

৫. লেখক কাদের দলে যোগ দিতে 'বড়দের' আহ্বান জানিয়েছেন?

 ক) মজুরদের দলে

খ) কৃষকদের দলে

গ) ছোটদের দলে

ঘ) ব্যবসায়ীদের দলে

সঠিক উত্তর: গ) ছোটদের দলে

৬. প্রাবন্ধিক কাদের 'ছোটলোক' বলেছেন?

ক) দরিদ্র মানুষকে

খ) শ্রমিক শ্রেণিকে

গ) অহংকারী বিত্তবানদের

ঘ) চাষী সম্প্রদায়কে

সঠিক উত্তর: গ) অহংকারী বিত্তবানদের

৭. দেশের সকল ঐক্যের মূল কিসে নিহিত?

ক) শিক্ষিত সমাজে

 খ) উপেক্ষিত শক্তির জাগরণে

গ) সামরিক শক্তিতে

ঘ) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে

সঠিক উত্তর: খ) উপেক্ষিত শক্তির জাগরণে

৮. 'ছোটদের' সাথে 'বড়দের' মিলন কেন প্রয়োজন?

ক) অর্থনীতিকে সচল করতে

 খ) দেশের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলের জন্য

গ) সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে

ঘ) বিদেশিদের খুশি করতে

সঠিক উত্তর: খ) দেশের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলের জন্য

৯. লেখক 'ছোটদের' সাথে কিসের সম্বন্ধ স্থাপন করতে বলেছেন?

ক) আর্থিক সম্বন্ধ

খ) চুক্তির সম্বন্ধ

গ) ভ্রাতৃত্বের সম্বন্ধ

ঘ) সামাজিকতার সম্বন্ধ

সঠিক উত্তর: গ) ভ্রাতৃত্বের সম্বন্ধ

১০. প্রবন্ধের বক্তব্য অনুসারে, 'ছোটকে বড় করিয়া তোলার সহজ উপায়' কী?

ক) বেশি অর্থ দেওয়া

খ) উচ্চ শিক্ষা দেওয়া

গ) ছোটর হাতে হাত মিলাইয়া দেওয়া

ঘ) তাদের শাসন করা

সঠিক উত্তর: গ) ছোটর হাতে হাত মিলাইয়া দেওয়া

১১. লেখক কাদের 'নগন্য' বলে মনে করেন?

 ক) দেশের চাষী সমাজ

খ) দেশের উপেক্ষিত সমাজ

গ) দেশের শিক্ষিত সমাজ

ঘ) নিজেদের স্বার্থ ও বিলাসিতায় মগ্ন লোকেরা

সঠিক উত্তর: ঘ) নিজেদের স্বার্থ ও বিলাসিতায় মগ্ন লোকেরা

১২. 'শুষ্ক মাটির উপর' কিসের রস পড়ার কথা বলা হয়েছে?

 ক) ফলের রস

খ) পানির রস

গ) কমলার রস

ঘ) আমের রস

সঠিক উত্তর: গ) কমলার রস

১৩. লেখকের মতে, কিসের অভাবে দেশটা শতধা খণ্ড হয়েছে?

 ক) জ্ঞানের অভাব

খ) টাকার অভাব

গ) মানুষে মানুষে আন্তরিকতার অভাব

 ঘ) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব

সঠিক উত্তর: গ) মানুষে মানুষে আন্তরিকতার অভাব

১৪. 'অমৃতের পুত্রেরা' বলতে প্রবন্ধটিতে কাদের বোঝানো হয়েছে?

ক) দেবদূতদের

খ) রাজপুত্রদের

গ) মানুষকে (সাধারণ জনতাকে)

ঘ) সন্ন্যাসীদের

সঠিক উত্তর: গ) মানুষকে (সাধারণ জনতাকে)

১৫. বর্তমানে দেশের সর্বাপেক্ষা আবশ্যক কী?

ক) অর্থনৈতিক উন্নয়ন

খ) হিন্দু-মুসলমানের মিলন

গ) রাজনৈতিক শান্তি

ঘ) শিক্ষার প্রসার

সঠিক উত্তর: খ) হিন্দু-মুসলমানের মিলন

১৬. প্রবন্ধ অনুসারে, 'তাহারাই দেশের প্রাণ'—এখানে 'তাহারা' কারা?

 ক) দেশের শিক্ষিত সমাজ

খ) দেশের নেতারা

গ) দেশের উপেক্ষিত জনশক্তি

 ঘ) দেশের ধনী সম্প্রদায়

সঠিক উত্তর: গ) দেশের উপেক্ষিত জনশক্তি

১৭. লেখক কেন 'বড়দের' দল ছেড়ে 'ছোটদের' দলে ভিড়েছেন?

ক) নিজের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে

 খ) ছোটদের প্রাণশক্তি জাগিয়ে তুলতে

গ) রাজনীতিতে সফল হতে

 ঘ) কেবল লেখালেখি করতে

সঠিক উত্তর: খ) ছোটদের প্রাণশক্তি জাগিয়ে তুলতে

১৮. কিসের আগমনকে আমরা 'বিশ্বাস' করতে পারি না বলে লেখক মন্তব্য করেছেন?

 ক) আনন্দের আগমন

খ) উন্নতির আগমন

গ) দরিদ্রের মাঝে মহামানবের আগমন

ঘ) নতুন দিনের আগমন

সঠিক উত্তর: গ) দরিদ্রের মাঝে মহামানবের আগমন

১৯. 'ছোট ছোট ঘরগুলিও যে আজ এক-একটি দুর্গ'— এখানে 'ছোট ঘর' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

ক) স্কুলের ঘর

খ) সাধারণ মানুষের বাসস্থান

 গ) মন্দিরের ঘর

ঘ) কারখানার ঘর

সঠিক উত্তর: খ) সাধারণ মানুষের বাসস্থান

২০. 'ভ্রাতৃত্বের সম্বন্ধ' না থাকলে কী ঘটে?

 ক) দেশের অগ্রগতি হয়

খ) দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়

গ) দেশ শতধা খণ্ড হয়

 ঘ) মানুষের সংখ্যা বাড়ে

সঠিক উত্তর: গ) দেশ শতধা খণ্ড হয়

 SSC Vocational Bangla Final Suggestion 2026 | এসএসসি ভোকেশনাল বাংলা চূড়ান্ত সাজেশন ২০২৬

১০০টি সমাস প্রশ্ন ও উত্তর BCS ও সরকারি চাকরির জন্য।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন