কচুপাতা মাথায় দিয়ে স্কুলে যেতাম – এক গরিব ছাত্রের শৈশবের হৃদয়ছোঁয়া গল্প।
উপশিরোনাম (Subtitle):
এই আবেগঘন বাস্তব কাহিনী একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের শৈশব স্মৃতি, স্কুল জীবনের সংগ্রাম এবং বন্ধুত্বের এক অমূল্য অনুভব বহন করে। পড়ুন এমন একটি গল্প যা আপনার শৈশবকে ছুঁয়ে যাবে।
মূল লেখা
শৈশবের গল্প যেখানে কাদা ছিল বন্ধু, আর কচুপাতা ছিল ছাতা
আমার নাম রাকিব। বাবা ছিলেন দিনমজুর আর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। আমরা থাকতাম মাটির ঘরের নিচে টিনের চাল দেওয়া ছোট্ট এক বাড়িতে। বর্ষা নামলেই ঘরের কোনায় কোনায় পানি চুইয়ে পড়ত।
বিদ্যালয়ের নাম ছিল বিষ্ণুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
প্রতিদিন যেতে হতো কয়েক কিলোমিটার হেঁটে। বর্ষাকালে পুরো রাস্তাটা হয়ে যেত একটানা কাদা। পা পিছলে যেত, পড়ে যেতাম, জামা-কাপড় ভিজে যেত। তখন মাথায় রাখতাম বড় একটা কচুপাতা – সেটাই ছিল আমাদের ছাতা।
মায়ের কথা ছিল প্রেরণা
আমার মা বলতেন – "পড়লে মানুষ হবি, কষ্ট একটু আজ আছে, কাল থাকবে না!"
তাই খালি পেটেই যেতাম স্কুলে, কিন্তু মনের ক্ষুধা ছিল অজস্র শেখার।
বন্ধত্বের আসল রূপ দেখেছিলাম রাশেদের কাছে।
আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল রাশেদ।
ওর পরিবারও গরিব ছিল, ওর মা ভিক্ষা করতেন।
তবুও রাশেদ তার টিফিনের মুড়ি আর কাঁচা মরিচ আমার সঙ্গে ভাগ করে খেত।
একদিন সে বলল –
“তুই খা, আমরা বন্ধু না?”
এই বাক্যটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে সুন্দর প্রস্তাব।
বই বিতরণ দিনে রাশেদের উপহার
একবার স্কুলে বই বিতরণ হচ্ছিল। আমার নাম তালিকায় ছিল না।
চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন রাশেদ তার নিজের বইটা এগিয়ে দিয়ে বলল –
“তুই না পড়লে আমারও ভালো লাগবে না।”
আমি কিছু বলিনি… শুধু চোখে জল ধরে রেখেছিলাম।
সবচেয়ে কঠিন দিন – যখন রাশেদ নেই
ক্লাস ফাইভের পর হঠাৎ জ্বরে রাশেদ মারা গেল।
স্কুলে গিয়ে তার খালি বেঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ।
তার ব্যাগটা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিলাম।
সেই দিনটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ দিন।
আজকের আমি, তখনকার আমির স্মৃতি বহন করে
আজ আমি শহরে চাকরি করি।
জীবন কিছুটা বদলেছে, কিন্তু ভিতরে এখনো সেই কচুপাতা মাথায় দেওয়া, কাদামাখা পা নিয়ে স্কুলে যাওয়া রাকিব বেঁচে আছে।
শেষ কথা (Conclusion):
এই গল্প শুধু আমার না, এই গল্প হাজারো গরিব-মধ্যবিত্ত ছাত্রের।
যাদের শৈশব ছিল বৃষ্টিতে ভেজা, ভালোবাসায় গড়া, কষ্টে রাঙানো।
আজও মনে পড়ে…
"এক খানা কচুপাতা, এক বন্ধু, একটুখানি ভালোবাসা… এতেই গড়া জীবন।”